ভিওসি রিপোর্ট

বাংলাদেশের পুলিশ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে গা ঢাকা দিয়েছিলেন ভারতের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ফরতাবাদ এলাকায়।

আরাভ খান যেই ভারতীয় পাসপোর্টে দুবাই গেছেন তার নম্বর ইউ ৪৯৮৫৩৮৯। পাসপোর্ট প্রদানের তারিখ ২৮ জুলাই ২০২০। ওই পাসপোর্টে স্থায়ী ঠিকানা ও জন্মস্থান হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের নরেন্দ্রপুরের ঠিকানা দেয়া রয়েছে। তার স্ত্রী সাজীমা নাসরিনের পাসপোর্টটিও ভারতীয়।আরাভের পাসপোর্টে কথিত বাবা-মা জাকির খান ও রেহানা বিবি খানের বাড়ির ঠিকানা হিসেবেও কন্দর্পপুর, উদয় সংঘ ক্লাব, রাজপুর-সোনারপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতা-৭০০০৮৪ উল্লেখ রয়েছে।

কলকাতার ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস (ইএম বাইপাস) ধরে সোজা ফরতাবাদ মোড় থেকে বাম দিকে ৮০০ মিটার ভেতরে ঢুকলেই কন্দর্পপুর উদয় সংঘ ক্লাব। সেখানে জাকির খানের নাম বলতেই এক নারী এসে তার বাড়ি দেখিয়ে দিলেন। বোঝাই গেলো, ওই এলাকায় যথেষ্ট পরিচিত জাকির খান। বছর দুয়েক আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান জাকির।

সেই বাড়িতে ঢুকতেই দেখা হলো জাকিরের স্ত্রী রেহানা বিবি খানের সঙ্গে। প্রথম দিকে কথা বলতে কিছুটা ইতঃস্তত বোধ করলেও গণমাধ্যমের কর্মী পরিচয় দিতেই কিছুটা স্বাভাবিক হন রেহানা।

মোবাইলে আরাভের ছবি দেখালে রেহানা বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে আমাদের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে এসেছিল। আমাদের বাসায় এক বছর ভাড়া ছিল, এরপর চলে যায়। মাসিক দুই হাজার রুপি করে ভাড়া দিত।’

রেহানার দাবি ‘আমাদের আধার কার্ড নিয়ে আরাভ কী একটা ডকুমেন্ট তৈরি করবে বলেছিল। সেই কারণে আমি ও আমার স্বামী উভয়ই ছেলের মতো বিশ্বাসে আরাভকে আমাদের আধার কার্ড দিয়ে দিই।’

আর সেই ভারতীয় আধার কার্ড দিয়েই নিজের ও স্ত্রীর ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করেছিলেন আরাভ খান। যদিও তাকে কোনদিনই সন্দেহ হয়নি বলেও জানান রেহানা। আরাভের পাসপোর্টে কথিত মা হিসেবে পরিচয় দেয়া রেহানা জানান, ‘বাড়িঅলার সঙ্গে একজন ভাড়াটিয়ার যে সম্পর্ক থাকে আরাভ খানের সঙ্গে আমাদেরও সেই সম্পর্ক ছিল।’

রেহানার দাবি, ‘আজকে (১৭ মার্চ) সকালেই আমি ইউটিউবে আরাভের বিষয়টি জানলাম। এলাকার লোকের সঙ্গেও খুব একটা মেলামেশা করত না আরাভ। বাইরেও খুব একটা বের হতো না।’

যদিও এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেল অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে আরাভকে চিনতেন। বিএমডব্লিউ মোটরসাইকেলে এলাকায় স্টান্ট বা কাড়িকুরি করতে তাকে দেখা যেত বলে জানালেন সেখানকার কয়েকজন বাসিন্দা। আরাভ এখানে নিজেকে একজন ফিল্ম আর্টিস্ট বলে পরিচয় দিতেন। এমনকি তার কথিত মা রেহানা বিবি খানও আরাভকে আর্টিস্ট বলেই জানতেন।

২০১৮ সালে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খানকে হত্যার পর পেট্রল ঢেলে লাশ পুড়িয়ে গাজীপুরে এক জঙ্গলের ভেতর ফেলে দেয় দুর্বৃত্তরা। ওই মামলার মূল অভিযুক্ত ছিলেন রবিউল ইসলাম, যে আরাভ খান নাম নিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে ভারত হয়ে এখন দুবাইয়ে। পরে জানা যায় প্রকৃত আসামি আরাভের পরিবর্তে সে সময় কারাগারে যান আবু ইউসুফ লিমন নামে স্থানীয় এক যুবক।

সূত্র বলছে, ওই খুনের ঘটনার পরই অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে সে বছরই ভারতে আশ্রয় নেন আরাভ খান। আসল পরিচয় গোপন করে আরাভ খান নামেই পরিচয় দিতে থাকেন তিনি। ভারতে এসেই আসামের গোয়ালপাড়ার বাসিন্দা সাজীমা নাসরিনকে বিয়ে করেন আরাভ, স্থানীয় সূত্রের খবর।

পরে এই আরাভ খান বিভিন্ন সময় আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করার পর ভুয়া পাসপোর্ট তৈরি করে দুবাই যান। সেখানে বিশাল জুয়েলারি শো-রুমের মালিক বনে যান। আর এর উদ্বোধনে ক্রিকেটের তারকা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, সামাজিক মাধ্যমে আলোচিত হিরো আলমসহ বাংলাদেশের অনেকে আমন্ত্রিত হওয়ার পর তা দেশের পুলিশের নজরে আসে। এরপরই এ নিয়ে খবর হয়।

আপন, সোহাগ, হৃদয় ইত্যাদি নামেও পরিচিত রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান।