প্রবল শক্তিতে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় মোখা।
এম এ রহিম. বাংলাদেশ থেকে
বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরএ সৃষ্ট অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রভাবে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত চলছে। এ কারণে উপকূল অঞ্চলের মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কক্সবাজারের ৫৫টি হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষনা করেছে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতি। ইতোপূর্বে ঘূর্ণিঝড় মোখা থেকে বাঁচতে টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিন দ্বীপের সকল হোটেল মোটেল ও রিসোর্টকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: আবু সুফিয়ান, ঘূর্ণিঝড় মোখা যেহেতু কক্সবাজার মুখী, সেহেতু কক্সবাজারসহ সেন্টমার্টিন দ্বীপ একটু ঝুঁকিতে রয়েছে। এজন্যই সেন্টমার্টিন দ্বীপের সকল হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষনা করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। একই সাথে সেন্টমার্টনে ভিন্ন জেলার লোকজনকে ইতিমধ্যে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
আবু সুফিয়ান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার সংকেত ১০ নং বাড়ার সাথে সাথে জেলার উপকূলীয় এলাকায় মাইকিং করে ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে ।বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল এই ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তিস্থল থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে প্রবল গতিতে এগুচ্ছে। ১৩ মে (শনিবার) রাতে সাড়ে ৫শ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল মোখা। এদিন গভীর রাতে এটি সুপার সাইক্লোনে রুপ নিয়ে আঘাত হানবে উপকূলবর্র্তী এলাকার জেলাগুলোতে।
মোখার পূর্বাভাসে বাংলাদেশের কক্সবাজারসহ.৮জেলায় বজ্রসহ ভারী বৃষ্টিপাতের আশংকা রয়েছে ।
এদিকে মোখার প্রভাবে দেশটির রবিবারের এসএসসি পরীক্ষা ও উপকূল এলাকার স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা অধিদপ্তর.।
এদিকে দেশের অন্যান্য সমদ্র বন্দর এলাকায় ৪ থেকে ৮নং সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে রবিবার সকাল নাগাদ উপকুল এলাকায় অঘাত হানতে পারে মোখা, জানিয়েছেন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১৩ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২০০কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সমুদ্র খুবই বিক্ষুদ্ধ রয়েছে।
বজলুর রশিদ আরও জানায়, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড়টি ভোর ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
ঘূর্ণিঝড় মোখা আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে রোববার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। আর রাত থেকে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব শুরু হতে পারে।
গতকাল রাত থেকেই কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোও ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১২ ফুট অধিক উচ্চ জলোচ্ছ্বাস হয়ে প্লাবিত হতে পারে ওই সব জেলাগুলোতে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারী (৪৪-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারী (২৮৯ মিলিমিটার) বর্ষণ হতে পারে এবং অতিভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে।
ইতো মধ্যে উপকুল এলাকর বাসিন্দাদের নিরাপদ এলাকায় সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। অনেক এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ৩থেকে ১০দিনের জন্য শুকনা খাবার মজুদ রাখা হচ্ছে।
যশোরের শার্শা উপজেলা নির্বাহি অফিসার নারায়ন চন্দ্র পাল জানান জনগণকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। প্রশাসনের বিভিন্ন এজেন্সি মোখা মোকাবেলায় কাজ করছে।