ভিওসি রিপোর্ট

ওড়িস্যার বালেশ্বরের কাছে একটি নয় ২টি এক্সপ্রেস এবং একটি মালগাড়ি দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়। বেঙ্গালুরু-হাওড়া যশবন্তপুর এক্সপ্রেস, শালিমার-চেন্নাই করমণ্ডল এক্সপ্রেস এবং একটি মালগাড়ি একসঙ্গে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। আপাতত স্থানীয় সূত্রে শে্য প্রাপ্ত খবর আনুযায়ী জানাগেছে এই জোড়া ট্রেন দুর্ঘটনায় ২৫০ জনের মৃত্যু ও ৯০০শ যাত্রী আহত হয়েছে। যদিও প্রত্যক্ষদর্শী ও ট্রেনযাত্রীদের আশঙ্কা,  মৃত্যু ও আহতের সংখ্যা আরও অনেক বাড়তে পারে। গুরুতর কয়েকশ আহতকে স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে ভর্তি করা হয়েছে।

১২৮৪১ আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেস শুক্রবার হাওড়া শালিমার স্টেশন থেকে চেন্নাইয়ের উদ্দেশ্যে ছাড়ে বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে। সন্ধ্যা ৭ টায় উড়িস্যার বালেশ্বরের বাহানাগা সে্টেশনে পৌছায়। সেখানেই একটি মালগাড়ির সঙ্গে মুখোমুখী সংঘর্ষ ঘটে করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটির। আপরদিকে ১২৮৬৪ ডাউন এসএমভিবি হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসটির কয়েকটি বগি পাশের লাইনে লাইনচ্যুত হয়। করমন্ডল এক্সপ্রেসের ১৮টি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। দুমড়ে মুচড়ে করমণ্ডল ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি লাইনচ্যুত হয়েছে মালগাড়িরও কয়েকটি বগী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় ওই একই সময় বিপরীত দিক থেকে আসা  হাওড়ার দিকে আসা বেঙ্গালুরু-হাওড়া এক্সপ্রেস সজোরে দুর্ঘঘটনাগ্রস্ত করমণ্ডলের উপর  ধাক্কা খেয়ে ছিটকে মালগাড়ির ওপর ঊঠে যায় কয়েকটি কয়েকটি বগী । ট্রেন যাত্রীরা জানিয়েছেন, করমণ্ডল এক্সপ্রেস পুরো গতিতেই যাচ্ছিল। একের পর এক কামরা শুধু লাইনচ্যুতই হয়নি। কার্যত  কমারাগুলো দেশলাই বাক্সের মতো উল্টে গিয়েছে। যেখান থেকে খালি ভেসে আসছে দুর্ঘটনার কবলে পড়া দুর্ভাগ্যদের আর্তনাদ। ট্রেনের একাধির বগি শুধু উল্টে যাওয়াই নয়, ঘুটঘুটে অন্ধকারের মাঝেও ট্রেন লাইন ও গোটা এলাকা জুড়ে মানুষকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে তারা দেখেছেন বলেই জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী ও ট্রেনযাত্রীরা। ভয়-আতঙ্কের আবহ সামলে তাঁদের বক্তব্য, চারিদিকে শুধুই রক্ত। কারও মাথা ফেটে গিয়েছে তো কারও হাত কেটা পড়েছে। প্রত্যেকেরই আশঙ্কা শয়ে শয়ে মানুষের মৃত্যু হয়েছে। শালিমার থেকে ট্রেনটি চেন্নাইয়ের পথ ধরায়  পশ্চিমবঙ্গের বহু  বাসিন্দা ট্রেনটিতে সওয়ার ছিলেন বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দক্ষিণ ভারতের চেন্নাই ও বেঙ্গালুরে চিকিৎসার জনা করমন্ডল এক্সপ্রেসে বাংলাদেশের বহু রুগী প্রতিদিন যাতায়াত করে। বাংলাদেশের কত পরিমান রুগি ওই ট্রেনে ছিল তা সরেজমিনে জানার জন্য একটি আগ্রগামী দলকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে বলে উপ=দূতাবাসের কাউন্সিলর (ভিসা) এ এস এম আলমাস হোসেন সংবাদকে জানিয়েছেন।

আলমাস জানান, এই জন্য ইতোমধ্যে উপ-দূতাবাসে একটি তথ্যকেন্দ্র (হেল্প লাইন) খোলা হয়েছে (Whatsapp সহ যার নম্বর-+৯১৯০৩৮৩৫৩৫৩৩) এই হেল্পলাইন নম্বরে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে তথ্য জানা বা জাননোর জন্য সবাইকে আনুরোধ করা হয়েছে। আলমাস হোসেন জানান, বাংলাদেশের অনেক রুগি ওই ট্রেনে থাকতে পারে। বাংলাদেশ থেকে অনেকেই তাদের স্বজনেদের খবর জানার জন্য ইতোমধ্যে ফোন করে যোগাযোগ করছেন। তারা আজ সকালে আমাদেরকে ৬ জন যাত্রীর নাম নাম জানিয়েছেন। এরা হলেন,সাজ্জাদ আলী, মো: আসলাম শেখ, খালেদ বিন আওকাত, মো: রাসেলুজ্জামান, মো: মোক্তার হোসেন ও রূপা বেগম খান। আলমাস হোসেন জানান, উপদূতাবাস নিখোঁজ বাংলাদেশিদের ছাড়াও আরও কি পরিমান রুগী যাত্রী আছে কিনা তা খোজ খবর নিয়ে উপ-দূতাবাসের তথ্য কেন্দরে জানাবে ঘটনাস্থলে পাঠানো ওই টীম। তার পরই জানা যাবে প্রকৃত অবস্থান।

দুর্ঘটনা কবলিত এলাকায় রাতভর চারিদিকে শোনা যাচ্ছে শুধু কান্না, মৃত্যু, হাহাকার। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে চলছে উদ্ধারকাজ।  ‌উড়িস্যার মুখ্য সচিব প্রদীপ জেনা জানিয়েছেন, বালাসোর জেলায় কয়েক ডজন অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। এরকমটা হয়ে যাবে স্বপ্নেও ভাবেননি যাত্রীরা৷ বলা হচ্ছে দশকের সবথেকে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা এটা। শিশু সহ প্রচুর বয়স্ক মানুষ ট্রেনে ছিলেন বলে খবর। জানা গিয়েছে ট্রেনের নীচে থেকে বহু বয়স্ক রোগীকে উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও বহু মানুষ বগির নীচে চাপা পড়ে রয়েছেন। দুর্ঘটনার পর প্রাথমিক পর্যায়ে উদ্ধার কাজে রাতেই স্থানীয় বাসিন্দারা স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসে অনেক আহত ও নিহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় তারা। আজ সকাল থেকে উদ্ধার কাজে নামানো হয়েছে বায়ূ সেনাদের।

দুর্ঘটনায় আহত ও জখমদের জন্য ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। যাঁরা দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন তাঁদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা, গুরুতর আহতদের  জন্য ২ লক্ষ টাকা এবং সামান্য জখমদের জন্য ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী। এই জোড়া দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জরুরী ভিত্তিতে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এদিকে টুইট করে শোকবার্তা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। করমণ্ডল এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনায় বাংলা থেকে ওড়িশায় প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও ওড়িশা সরকার এবং রেলের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছেন। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের তরফে খোলা হয়েছে  দুটি হেল্পলাইন নম্বর। নম্বর দুটি হলো- ০৩৩-২২১৪৩৫২৬/ ২২৫৩৫১৮৫। করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক।তিনি  সকালেই দুর্ঘটনাস্থলে  পৌছাইয়াছেন।

রেল সূত্রে জানা যাচ্ছে, মালগাড়ির সঙ্গে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের মুখোমুখি সংঘর্ষের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে মালগাড়ির ওপরে উঠে যায় করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন।

কীভাবে দুটি ট্রেন এক লাইনে ঢুকে পড়ল ? সিগনালিংয়ের কোনও সমস্যার জের নাকি কারোর গাফিলতির জেরে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা, খতিয়ে দেখার কাজও শুরু করেছে রেল দপ্তর।

 

: