এম এ রহিম, বাংলাদেশ থেকে
দূর্গোৎসবে ভারতের ভোজন রসিক বাঙ্গালিদের ইলিশের স্বাদ দিতে বিশেষ বিবেচনায় প্রথম চালানে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ৭৭দশমিক ০১মেট্রিকটন ইলিশ গেল ভারতে। বৃহস্পতিবার বিকেলে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ইলিশের প্রথম চালান ভারতে গেছে বলে জানান,বেনাপোল বন্দর মৎস্য কোয়ারেনটাইন কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান।
পদ্মার ইলিশ পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের কাছে প্রিয় হলেও বাংলাদেশের চাহিদার বিবেচনায় বিভিন্ন সময় তা রপ্তানি বন্ধ রাখে বাংলাদেশ সরকার। ২০১২ সালের আগে ভারতে ইলিশ রপ্তানি করা হতো। ইলিশের উৎপাদন কমে যাওয়ায় ২০১২ সালের পর ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ সরকার। ইলিশ রপ্তানি বন্ধ থাকলেও দূর্গোৎসবকালিন ভারতের বাঙালিদের এই মাছের স্বাদ দেয়ার জন্য বিশেষ বিবেচনায় গতবছর ২০২২ সালে ৫৯ প্রতিষ্ঠানকে ২৯০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেয়া হয়েছিল মাত্র ১৩০০ মে.টন। ২০২১ সালে ১১৫ প্রতিষ্ঠানকে ৪ হাজার ৬শমেট্রিকটন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমোদন দেয় সরকার। ২০২০ সালে দূর্গাপূজা উপলক্ষে এক হাজার ৪৫০ টন এবং ২০১৯ সালে ৫০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছিল সরকার।বেনাপোল মৎস্য কোয়ারেন্টিন পরিদর্শক আসওয়াদুল আলম জানান ইলিশের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান-গুলোর মধ্যরয়েছে মাহিমা এন্টারপ্রাইজ, তানিসা এন্টারপ্রাইজ, সেভেন স্টার ফিস প্রসেসিং কোং, রিপা এন্টারপ্রাইজ, সাউদার্ন এন্টারপ্রাইজ,বিশ্বাস এন্টারপ্রাইজও প্যাসিফিক সি ফুড লিমিটেড।অপরদিকে ভারতের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানেরগুলো হল-এস আর ইন্টারন্যাশনাল, নাজ ইমপেক্স প্রাইভেট লিমিটেড, বিমল রায় ও বারখা বিকাস ফিস এজেন্সি। এদিকে বন্দর থেকে মাছ রপ্তানি করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করেন এমি এন্টারপ্রাইজ ও গনি এন্ড সন্স নামে দুটি সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান।প্রতিকেজি ইলিশের রপ্তানি মূল্য ১০মার্কিন ডলার। এবার দুর্গাপূজায় প্রায় চার হাজার টন ইলিশ মাছ ভারতে রফতানি হবে।।আগামী ৩০অক্টোবর পরর্যন্ত ইলিশ রপ্তানি করতে পারবে অনুমোদন পাওয়া ৭৯ প্রতিষ্ঠান। আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ থেকে তিন হাজার ৯৫০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
ভারতে মাছ রফতানিতে খুশি সেদেশের নাগরিকেরা ও ব্যাবসায়িরা ।
বুধবার (২০সেপ্টেম্বর)বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জারী করা এক প্রজ্ঞাপনে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে সরকার।-প্রজ্ঞাপনে ৭৯টি প্রতিষ্ঠানকে ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রতিটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ ৫০টন করে ইলিশ রপ্তানির শর্ত সাপেক্ষে অনুমোদন পেয়েছে।বেশির ভাগ ইলিশ বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানি হবে। তবে অনুমোদনের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সরকার মৎস্য আহরণ ও পরিবহণের ক্ষেত্রে কোনোরকম বিধিনিষেধ আরোপ করলে সঙ্গে সঙ্গে রপ্তানির এ অনুমতির মেয়াদ শেষ হবে। আবার সরকার প্রয়োজন মনে করলে রপ্তানির এই আদেশ যেকোনো সময় বন্ধও করতে পারবে বলে অনুমোদনের শর্তে বলা হয়েছে।
শারদীয় দূর্গাৎসবকে সামনে রেখে সরকার প্রতিশ্রুত প্রায় ৪হাজার টন ইলিশের প্রথম চালানে ১২টি ট্রাকে ৪৫টন সুস্বাদু রুপালি ইলিশ বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে রফতানির অপেক্ষায় সীমান্তে দাঁড়িয়ে আছ।। শুল্কমুক্ত কোটায় রফতানি করা হবে ইলিশের চালান।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল হাসান জানান মৎস্য অধিদপ্তরের ডিজির অনুমতি না পাওয়ায় চালান ছাড় হয়নি। আজই হবে ছাড়, বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমসের কার্গো সুপার কলিম উল্লাহ ও বেনাপোল সিএডএফ এজেন্ট এম ই ইন্টার প্রাইজের প্রতিনিধি আলমঙ্গীর হোসেন জানান, বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি অনুমোদনপত্র আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে চিঠি মারফত জানা যায় দেশের ৭৯টি প্রতিষ্ঠানের অনূকুলে ৩ হাজার ৯৫০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি প্রদান করা হয়। পাবনার সেভেন স্টার ও প্যাসিফিক সহ দেশের বিভিন্ন মাছ রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান তাদের সংগ্রহে রাখা ইলিশ বেনাপোলে পাঠায়। বৃহস্পতিবার বেনাপোলে রপ্তানি সংক্রান্ত বৈধ কাগজপত্রের কাযর্ক্রম শেষে মাছ ভারতে রপ্তানি করা হয়। পর্য্যায়ক্রমে নির্ধারিত পরিমান বেনাপোল কাস্টমস হাউজের যুগ্ম কমিশনার শাফায়াত হোসেন জানান, প্রতিটি পণ্যচালান রপ্তানিকালে শুল্ক কর্তৃপক্ষ এস আই ওয়ার্ল্ড সিস্টেম পরীক্ষা করে অনুমোদিত পরিমাণের অতিরিক্ত পণ্য রপ্তানি না করার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। অনুমতির মেয়াদ আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। তবে সরকার মৎস্য আহরণ ও পরিবহণের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপ করলে তা কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ অনুমতির মেয়াদ শেষ হবে।ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমোদনের আবেদন মন্ত্রণালয়ে যাচাই-বাছাই করে শর্ত সাপেক্ষে দেশের ৫০ টি প্রতিষ্ঠানকে ৩৯ হাজার ৯’শ ৫০ মেঃ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয় বলে জানান উপজেলা মৎস কর্মকর্তা।
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে গত ১ সেপ্টেম্বর কলকাতা ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে আবেদন করে। এতে পাঁচ হাজার টন ইলিশের চাহিদার কথা জানায় ব্যবসায়ীরা। পরে ৪ সেপ্টেম্বর সেই আবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এসে পৌঁছালে যাচাই বাছাই করে প্রায় ৪ হাজার টনের অনুমতি দেয় বাংলাদেশ সরকার।