ভিওসি রিপোর্ট

বিসিসিআই-এর  শীর্ষ পদ থেকে নিশ্চিত সরিয়েই দেওয়া হচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেটের রাজা-মহারাজা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে। এই খবর জানার পর সারাবিশ্বের বিশেষ করে বাঙালির আবেগে অঘাত লেগেছে। বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের জায়গায় পরবর্তী সভাপতি হতে চলেছেন প্রাক্তন বিশ্বজয়ী ভারতীয় ক্রিকেটার রজার বিনি ও সচিব পদে বহাল থাকছেন অমিত শাহের পুত্র  জয় শাহ। রাজীব শুক্লা হতে পারেন বিসিসিআইয়ের পরবর্তী সহ সভাপতি। এছাড়া আইপিএলের চেয়ারম্যান পদে বসতে পারেন অরুণ ধামাল।

১৮ অক্টোবর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বার্ষিক সাধারণ সভা। তার আগে  ১১ অক্টোবর (মঙ্গলবার)ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (বিসিসিআই)আসন্ন নির্বাচন সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে মুম্বইয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন বিসিসিআই কর্তারা। ওই বৈঠকেই বোর্ডের সভাপতি, সচিব সহ একাধিক পদে কারা বসবেন ইতোমধ্যে তার একটা স্পষ্ট  আভাস পাওয়া গেছে।  শীর্ষ আধিকারিকদের ওই বৈঠকেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল যে, সৌরভ আর সভাপতি পদের জন্য লড়াই করবেন না।  তাই সৌরভের নামে কোনও মনোনয়ন পেশ  করা যাবেনা।এ ব্যাপারে বিশিষ্ট সাংবাদিক ও ক্রীড়া বিশারদ গৌতম ভট্টাচার্য বলছেন যে, বিজেপি-র একাংশ সৌরভের প্রতি রুষ্ট,  তাই তাকে সরানোর ব্যাপারে তাদের লম্বা হাত কাজ করছে। এই সিদ্ধানত ক্রিকেট প্রশাসনের সিদ্ধান্ত একদমই নয়।। গৌতম ভট্রাচার্য্য বলেন, ‘যেহেতু সৌরভ হয়তো বোর্ডের মতাদর্শের যথেষ্ট অনুকরণ করেননি। তবে অমিত শাহ-র পুত্র জয় শহ বিসিসিআই সভাপতি হবেন না এর বিশেষ কারণ আছে। ক্রিকেট মহল বা রাজনৈতিক মহলের  ধারণা, নরেন্দ্র মোদী বারবার যে পরিবারতন্ত্র বিরোধী কথা বলেছেন, তাই  জয়কে সৌরভের স্থলে আনলে এটা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠবে। এটা ভেবেই জয়কে সভাপতি করা হল না। এ্কই সঙ্গে সৌরভকেও বার্তা দেওয়া হল যে, আমরা তোমার সঙ্গে আর লম্বা রাস্তা হাঁটতে চাই না।’

কোনও কোনও মহল থেকে বলা হচ্ছে, সৌরভ নয়, বরং আইসিসির চেয়ারম্যান পদে ভারতের প্রতিনিধি হতে পারেন জয় শাহ । তবে বোর্ডের একাংশের দাবি, আপাতত সচিব হিসাবে ২০২৫ সাল পর্যন্ত নিজের মেয়াদ সম্পূর্ণ করবেন জয়। তারপর ভারতীয় ক্রিকেটের প্রশাসন থেকে তাঁকে তিন বছরের জন্য বাধ্যতামুলক কুলিং অফে যেতে হবে। সেই সময় আইসিসি চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য ঝাঁপাতে পারেন  অমিত শাহ-পুত্র জয়।

এ ব্যাপারে বিশ্বের প্রতিটি বাঙালি মনে করছেন এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। শুধু ক্রিকেট প্রশাসনের সিদ্ধান্ত নয়। কারোর কারোর মনে হচ্ছে যে, কলকাতার রেড রোডে ১ সেপ্টেম্বর বাংলার দুর্গোৎসবকে ইউনেস্কোর বিশেষ স্বীকৃতি দিয়েছে। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন সৌরভ। মুখ্যমন্ত্রীর পাশে সৌরভের বসাটাই কি এই সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করল! কারোর মনে হচ্ছে সেটা নয়। তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে এলেন না গত বিধানসভা নির্বাচনে, সেটাই মুখ্য কারণ। সেই সময় থেকেই বিজেপি-র একাংশ সৌরভের প্রতি রুষ্ট হয়েছে। সৌরভের মতো ব্যক্তিত্বকে যদি প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরানোই হত, তাহলে একই দিনে বলা যেত যে, তোমাকে আমরা আইসিসি-র জন্য ভাবছি, তাই আমরা অন্য লোককে আনছি। সেটা কিন্তু বলা হয়নি।

নিয়ে স্পষ্টভাবে তৃণমূল মুখপাত্র কুনাল ঘোষ  জানিয়েছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার উদাহরণ এটি।  অন্যদিকে সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, খেলার দুনিয়া থেকে রাজনীতিকে অবশ্যই দূরে রাখা উচিত ।পাশাপাশি তিনি একইভাবে বলেন, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যেন রাজনীতি থেকে দূরেই থাকেন। তৃণমূলের মুখপাত্র কুনালের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মুখ খুলেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি জানান, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বিসিসিআইয়ের সভাপতি পদে চিরকাল থাকবেন, এমন কোন চুক্তি কোনদিনই হয়নি। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের চলে যাওয়ার পেছনে কোনোভাবেই রাজনীতির যোগ নেই বলে দাবি করেন দিলীপ ঘোষ।

রাজনৈতিক মহলের  হেভিওয়েটরা বিসিসিআই-র প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সরে যাওয়া নিয়ে নানান মন্তব্য করলেও এখনো পর্যন্ত সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি এ ব্যাপারে। তবে এই সিদ্ধান্ত যে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের অনুরাগীদের কাছে বড় ধাক্কা তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।