এম এ রহিম, বাংলাদেশ থেকে
বেনাপোল কাস্টম হাউসের সহযোগিতায় উভয় দেশের আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধিসহ সমস্যা ওসম্ভাবনার বিষয়ে ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স-র যৌথ উদ্দ্যোগে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেনাপোল কাস্টম কমিশনার আবদুল হাকিমের সভাপতিত্ব দুই দেশের উচচ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এই সভায় যোগদেন। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এর প্রেসিডেন্ট ও নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল মাতলুব আহম্মেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ ল্যন্ডপোর্ট অথোরিটির মেম্বর ডেভেলপমেন্ট (অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা আক্তার, খুলনায় নিযুক্ত ভারতীয় এ্যাসিট্যান্ট হাইকমিশনার জিত সাগর, বেনপোল বন্দর পরিচালক মনিরুজামান, কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনের প্রথম সচিব (বানিজ্য),সামসুল আরিফ, যুগ্ম-কমিশনার আঃ রশিদ মিয়া,ও শাফায়েত হোসেন, ঢাকায় নিযুক্ত সেটট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া-কান্টি প্রধান অমিত কুমার, চেম্বার অব কমার্সের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আযাদ, পরিচালক মতিয়ার রহমান, বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস এ্যাসোসিয়েশনে সাবেক সভাপতি জনাব মফিজুর রহমান সজন এবং এলপিএল বন্দর কর্মকর্তা শোভন বিশ্বাস প্রমুখবৈঠক শেষে দু’দেশের কর্মকর্তারা বেনাপোল ও পেট্রাপোল বন্দর ও চেকপোস্ট এলাকা পরিদর্শন করেন। বন্দর এলাকায় রপ্তানি শেড নির্মাণ, দ্বিতীয় গেট ছয় মাসের মধ্যে চালু করাসহ পদ্মা ব্রীজের কারণে ভারতগামী যাত্রীরা ভোর ৪.০০ টার মধ্যে বেনাপোলে এসে পৌছায় অথচ বন্দর কর্তৃপক্ষ সকাল ৬.৩০ এর আগে গেট খোলে না। ফলে চিকিৎসা, ভ্রুমন, ব্যাবসা ও শিক্ষাসহ বিভিন্ন কাজে ভারতগামী সাধারণ যাত্রীরা ইন্টারন্যাশনাল টার্মিণালের সামনে রাস্তায় দাড়িয়ে চরম ভোগান্তির স্বীকার হয়। এসব বিষয়ে অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা আক্তারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। পেট্টাপোল এলপিএল বন্দর কর্মকর্তা বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক খালি হতে বিলম্ব হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন বন্দরে প্রায় ১,০০০ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক খালাসের অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছে। ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক সাত দিনেও খালি হয় না । বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে পণ্য রপ্তানির পূর্বে কাস্টমস হাউসে অনলাইন বুকিং দাখিল করার পর তা সাফটা সার্টিফিকেটের জন্য ডক্যুমেন্ট ঢাকাতে দাখিল করতে হয়। এছাড়াও এক্সক্লসিভ ডিপারমেন্ট ও প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের সার্টিফিকট দাখির করতে সময় লেগে যায় ৬ থেকে ৯দিন। সেখানে ই-বুকিং দাখিলের কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তারা ঋণপত্র এবং সংশ্লিষ্ট ইনভয়েজের বিপরীতে সার্টিফিকেট ইসু করে থাকেন। রপ্তানি কার্যক্রম দ্রুত করার জন্য ই-বুকিং দাখিল ব্যতিরেকে ইনভয়েজ প্যাকিংলিস্ট ও ব্যাংক হতে প্রাপ্ত ই-এক্সপির বিপরীতে করা প্রয়োজন। এই সহজ ব্যবস্থা চালু করলে রপ্তানিকার্যক্রম ২ দিনে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। বেনাপোল কাস্টম কমিশনার সার্বিক বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এর প্রেসিডেন্ট আব্দুল মাতলুব আহম্মেদ কমিশনারকে ধন্যবাদ জানান।
এছাড়াও ভারত থেকে কনটেইনার ট্রেনে আসা পণ্য বাংলাদেশে খালাস করে খালি রেল ফিরে যায় ভারতে। ওই খালি ট্রেনের ভাড়াও ব্যবসায়ীদের মেটাতে হয়। তাই ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে খালি ট্রেনে পণ্য রপ্তানিতে দুই দেশের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সম্মত হয়েছে। ফলে শিগ্গিরই ট্রেনে পণ্য রপ্তানির দুয়ার উন্মোচিত প্রায়।ইতোমধ্যে ফিরতি ট্রেনে বাংলাদেশের পণ্যরপ্তানির অনুমতি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কন্টেইনার ট্রেন খালি ফিরে গেলেও আসা-যাওয়ার খরচ বহন করতে হতো ব্যবসায়ীদের। প্রতি ৫০ কিলোমিটারের জন্য ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করে ভাড়া গুণতে হয়। এখন ফিরতি যাত্রায় রপ্তানি পণ্যপরিবহনের সুযোগ তৈরি হওয়ায় তুলনামূলক কম খরচে পণ্য রপ্তানি করতে পারবেন দি দেশের ব্যবসায়ীরা।এতে করে সময় বাঁচবে তেমনি ব্যবসায়িরাও আথির্কভাবে উপকৃত হবে। সাশ্রয় হবে আর্থিকভাবেও।বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. সাইদুজ্জামান তথ্য দিয়ে বলেন, চার ধরণের ট্রেনে করে ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানি করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—এনএমজি র্যাক, বিসিএন ওয়াগান, কনটেইনার ও পার্সেল ট্রেন। গত জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ২৮৮টি ট্রেনে করে ভারত থেকে বিভিন্ন ধরণের আমদানিপণ্য বাংলাদেশে এসেছে। এর মধ্যে শুধু কনটেইনার ট্রেন ভারতে খালি ফিরে যাওয়ার সময় ভাড়া নেওয়া হয়। গত ১০ মাসে ৫৯টি কনটেইনার ট্রেন বেনাপোল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
তিনি বলেন, ভারত থেকে আসা কনটেইনার ট্রেনে ২০ ফুট লম্বা ৬০টি অথবা ৪০ফুট লম্বা ৩০টি করে কনটেইনার থাকে। ন্যূনতম ৫০ কিলোমিটার রেলপথ অতিক্রমের জন্য ৪০ ফুটের কনটেইনারে পণ্যসহ ভাড়া ১২ হাজার ৪৮০ টাকা ও খালি কনটেইনারের ভাড়া ৯ হাজার ১৫০ টাকা। আমদানি পণ্যের জন্য ভাড়া নির্ধারিত থাকলেও রপ্তানিপণ্যের জন্য এখনো কোনো ভাড়া নির্ধারণ করেনি বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মতিয়ার রহমান বলেন, ফিরতি ট্রেনে পণ্যরপ্তানির জন্য দীর্ঘ দিনধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন তারা । জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সেই দাবি বাস্তবায়ন করায় এ পথে আমদানি-রপ্তানি বাড়ার সাথে সাথে সরকারের রাজস্বও বাড়বে আশাতিত, বলেছেন মতিয়ার রহমান।