নিজস্ব প্রতিবেদন
ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কম্যান্ড যথাযোগ্য মর্যাদায় বাংলাদেশের বিজয় দিবস উদযাপন করেছে। দিবসটি উপলক্ষে বর্ণঢ্যময় নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে আটটা থেকে কলকাতা ফোর্ট উইলিয়ামে শুরু হয় বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিকাতা। বিজয় স্মারকে শ্রদ্ধা জানান ভারত ও বাংলাদেশের বর্তমান ও সাবেক সেনা কর্মকর্তারা।১৯৭১ সনে মুক্তিকামী বাঙালিদের নানা ভাবে সহায়তা করেছে প্রতিবেশি দেশভারত। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেয়া থেকে শুরু করে ১৯৭১-র ৩ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেয় ভারতীয় সেনারা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণ উৎস্বর্গ করেছিলেন কয়েক হাজার ভারতীয় সেনা সদস্য। ৫১ বছের ধরেই তাই বিজয় দিবসকে যথাযোগা মর্যাদায় উদযাপন করে আসছে ভারতীয় সেনা বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় সদরদপ্তর কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে এদিন তিন বাহিনীর পক্ষ থেকে সকালে ফোর্ট উইলিয়ামের মূল ফটকের কাছে অবস্থিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনাবহিনীর শহীদ জওয়ানদের স্মরণে বিজয় স্মারকে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রশিদ, কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল (আইপিএস), ভারতের সাবেক বিমানবাহিনীyর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল (অব.) অরূপ রাহা, বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা-বীরপ্রতিক ভারতের পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির প্রমুখ। এ সময় ভারতের সেনাবহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিজয় দিবসের এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় আগত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা মিলিয়ে ৬০ জনের একটি প্রতিনিধি দল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলন। এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশের বীর প্রতীক ও ভারতের পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির।
শহিদ জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আর.পি কলিতা।
পরে সেনাবাহিনীর মাঠে আয়োজিত একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সম্বলিত একটি প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি দলটি।ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, আমি ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে একাত্তরে যুদ্ধ করেছি। পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসার সময় বেশ কিছু তথ্য নিয়ে এসেছিলাম, এ ব্যাপারে দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সহায়তা করেছি। যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের আত্মত্যাগ দেখেছি, রক্তের স্রোত দেখেছি। আমি দীর্ঘদিন ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়েছি তাই ধীরে ধীরে দেখছি যে ভারতীয় সেনাবাহিনী খুবই দক্ষ বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। সময়ের প্রয়োজনে তারা নিজেদেরকে আরও বলিয়ান করছে। পাশাপাশি জনগণের সঙ্গে মিশে থেকে তাদের কল্যাণেও অনেক কাজ করছে। এটা খুবই প্রশংসার দাবি রাখে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি ভারতীয় সেনাবাহিনীর যে শ্রদ্ধা সেটা আমরা সঠিকভাবে উপভোগ করি।
এর পরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আরপি কলিতা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেন তিনি। এ ছাড়া তার বক্তব্যে উঠে আসে চলমান চিন-ভারত সিমান্তের উত্তেজনার বিষয়টিও।