ভিওসি রিপোর্ট

২০২৪ সালে লোকসভা ভোটের আগে মোদি সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে বিরোধী দলগুলোর ভার্চুয়পাল বৈঠক  হয়েছে শুক্রবার সন্ধ্যায়। সোনিয়ার ডাকা এই ভার্চুয়াল  বৈঠকে ১৯টি বিরোধী দল আংশ নিয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল প্রধান মমতা ব্যানার্জি, শরদ পাওয়ার, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভব ঠাকরে, ঝাড়খণ্ডেরর মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন, এলজেডি-র শরদ যাদব, সিপিএম-র সীতারাম ইয়েচুরি ও  ফারুক আব্দুল্লার মতো বিরোধী দলের নেতারা। এ ছাড়াও কংগ্রেস, তৃণমূল, এনসিপি, ডিএমকে, শিবসেনা, জেএমএম, সিপিআই, সিপিএম, ন্যাশনাল কনফারেন্স, আরজেডি, এআইইউডিএফ, ভিসিকে, লোকতান্ত্রিক জনতা দল, জেডিএস, আরএলডি, আরএসপি, কেরল কংগ্রেস মানি, পিডিপি, আইইউএমএ-র প্রতিনিধিরাও ভার্চুয়াল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।। এই বৈঠকে সমাজবাদী পার্টির কোনও প্রতিনিধি ছিলনা।

বিরোধীদের এই ভার্চুয়াল বৈঠকে ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের কৌশল ও রণনীতি কি হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ালোচনা হয়েছে, বাদল অধিবেশনে কেন্দ্রের লাগাতার বিল পাশ, এমনকী, বিমা বিল পাশ নিয়ে রাজ্যসভায় কেন্দ্রের আচরণ নিয়। পাশাপাশি কৃষকদের লাগাতার বিক্ষোভ, পেগাসাস ইস্যু, দেশের অর্থনীতি, করোনার টিকাকরণ নিয়েও এই বৈঠকে কথা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই স্পষ্ট যে, এই ইস্যুগুলো নিয়ে আগামী দিনে মোদি সরকারের বিরোধিতায় পথে নামতে চলেছে বিরোধীরা। মূলত: বাদল অধিবেশনেই বিরোধী জোট-র ঐক্য প্রত্যক্ষ‌ হয়েছিল ।

জানা গেছে, বৈঠকে শরদ পাওয়ার রাজ্যের ক্ষমতা খর্ব করার বিষয়টি আলোচনায় এনেছেন। অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এবং মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্ভব ঠাকরে অবিজেপি রাজ্যগুলির ওপর কেন্দ্রের দ্বিচারিতার বিষয় সামনে এনেছেন। এই বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে  কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী সাংবাদিকদের জানান। বিরোধীদের সঙ্গে এই বৈঠকে জোটের পক্ষে সওয়াল করে সোনিয়া গান্ধী বলেন, ‘২০২৪-কে সামনে রেখে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগুতে হবে। রাজ্য ভিত্তিক কিছু জটিলতা থাকবে। তবে অতিতের সে সব কিছু ভুলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে‌ আমাদের। তবে এই জোটের নেতৃত্ব যে কংগ্রেস দিতে চায় তার স্পষ্ট ইঙ্গিতও দিয়েছেন  সোনিয়া গান্ধী।

জাতীয় নির্বাচন হতে বছর তিনেক বাকি থাকলেও এখন থেকেই বিরোধী দলগুলির ফ্রন্ট তৈরি করতে হবে বলে বাংলায় একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে বার্তা দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল নেত্রীর সেই  কথাই শুক্রবার শোনা গেল সনিয়ার মুখে। এ দিন ১৯ বিরোধী দলের বৈঠকে কংগ্রেসের অন্তর্বর্তীকালীন সভানেত্রী স্পষ্ট করে দিলেন, পাখির চোখ ২০২৪। সেটা মাথায় রেখে ধাপে ধাপে পরিকল্পনা সাজাতে হবে বিরোধীদের। তিনি বলেন,’এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু আমাদের সব কিছুর উর্ধ্বে উঠে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কারণ এছাড়া কোনও বিকল্প নেই। এখন থেকে আমাদের একটাই লক্ষ্য- আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের নীতি এবং সংবিধানের মূল্যবোধগুলি পাথেয় করে চলতে হবে সবাইকে।’

২০১৯ সালেও বিরোধী দলগুলি বিজেপির বিরুদ্ধে একজোট হওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তা বিভিন্ন কারণে বাস্তবায়িত হয়নি। নিজ নিজ স্বার্থের বেড়া ডিঙিয়ে সারাদেশে জোটের ঐক্য সম্ভব হয়নি।  বিরোধীদের এই জোটগঠন না হওয়ায়র কারণে, ২০১৪ সালের  নির্বাচনের চেয়েও বেশি আসন জিতে ২০১৯-এ দিল্লির ক্ষমতায় ফেরেন নরেন্দ্র মোদী । তাই সনিয়া গান্ধী এই একই ভুলের পুনরাবৃত্তি ২০২৪-এ আর  করতে চাননা।

তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা, এই বিরোধী জোটের নেতৃত্বে যে কংগ্রেস থাকবেন সনিয়ার এমন ইচ্ছায় পরবর্তীতে বিরোধীদের মধ্যে মতানৈক্য তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।তাঁদের মতে, কারণ কংগ্রেসেরাঁগের মত সেই শক্তি আর নেই।এখন রাজ্যে রাজ্যে আঞ্চলিক দলগুলির প্রভাবই বেশি। তবে ভার্চুয়াল বৈঠকে বিরোধী নেতা-নেত্রীর  ‘বেসুরো’ ভাবনার কিছুটা আঁচ করতে পেরেই কংগ্রেসের অন্তর্বর্তীকালীন সভানেত্রী বলেন, কেউ যদি ভাবেন যে কংগ্রেসের কোনও অস্তিত্ব নেই তা হলে তাদের এই ধারনা অমূলক হবে।’

ভি-১৩