বিশেষ প্রতিনিধি, ভিওসি
ঢাকা : ভারত থেকে বাংলাদেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার টিকা (কোভিশিল্ড) সরবরাহের পর থেকেই বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্য করে আসছিলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর আমীর জুনায়েদ বাবুনগরী-সহ সংগঠনের অন্যান্য নেতারা। বিতর্কিত মন্তব্য করে তিনি বলেছিলেন, করোনার টিকার নামে ভারত গঙ্গার জল সরবরাহ করছে। একইসঙ্গে তিনি জনগণকে মাস্ক পরতেও নিষেধ করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘কওমি মাদ্রাসায় কখনও করোনা আসবে না’। এখানেই শেষ নয়, বাংলাদেশের কট্টর ইসলাপন্থী নেতারা বলেছিলেন-ভারতীয় টিকা নেওয়ার পর অনেকের জ্বর-সহ মারত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। যদিও, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়ায় হেফাজতের অনেক নেতাই টিকা নিয়েছেন গোপনে। গত ৮ আগস্টই বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গাড়িতে বসেই চিনের তৈরি সিনোফার্মের টিকা নেন জুনায়েদ বাবুনগরী। কিন্তু, টিকা নেওয়ার পর সেই দিনই তাঁর শরীরে জ্বর আসে।
হাটহাজারী মাদ্রাসার মুখপাত্র তথা হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর প্রাক্তন যুগ্ম মহাসচিব হাফেজ মাঈনুদ্দীন রুহী। তিনি বলেন, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিস, কিডনি সমস্যা-সহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশে-এর আমীর বাবুনগরী। টিকা নেওয়ার পর ৮ আগস্টই তাঁর জ্বর আসে। কিন্তু, সেই জ্বর মাঝে মধ্যে কমলেও গত ১৮ আগস্ট তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। পরবর্তী দিন তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। তড়িঘড়ি তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু প্রাণে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর প্রাক্তন যুগ্ম মহাসচিব হাফেজ মাঈনুদ্দীন রুহী বলেছেন, টিকা নেওয়ার পরই তাঁর জ্বর আসে, তবে টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি-না, তা বলা যাবে না। চিকিৎসক বলেছেন স্টোক হয়েছিল। মাঈনুদ্দীন রুহী বলেন, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না-কি হৃদরোগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। সরকারের কাছে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ জুলাই বাবুনগরী টিকার জন্য নাম নথিভুক্ত করেছিলেন। তাঁকে চিনের তৈরি সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হয়েছে। এর আগে বিভিন্ন আলোচনায় তিনি দাবি করেছিলেন, মাদ্রাসায় করোনা আসবে না। চলতি বছরের গত ১১ এপ্রিল চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছিলেন, যেখানে হেফজখানায় ছাত্ররা কুরআন পাঠ করে, সেখানে করোনা আসবে না। এছাড়া গত ৩০ জুলাই এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, করোনা মহামারির দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে সবার প্রধান কর্তব্য হচ্ছে, সব প্রকার অন্যায়, জুলুম ও পাপাচার থেকে বিরত থাকা এবং ভবিষ্যতে আর কখনও এ সব না করার সংকল্প নিয়ে তওবা করে আল্লাহমুখী হওয়া। করোনা থেকে দূরে থাকতে হলে কী করতে হবে, তার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বেশি বেশি তওবা, ইসতিগফার, নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত ও জিকিরে থাকতে হবে। ঠিকমতো নামাজ-রোজা করলে মুসলমানদের করোনা হবে না, বারবার এই ধরনের মন্তব্য করেছিলেন তিনি। অথচ তাঁর মৃত্যু নিয়েই তৈরি হল ধোঁয়াশা !