বিপুল কৃষ্ণ দাস
আগামী বছরের প্রথম দিক থেকেই ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে রয়েছে বিধানসভা নির্বাচন। ক্ষমতা দখল বা ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন দল ইতিমধ্যেই মাঠে নেমে পড়েছে মাঠে। নির্বাচনে কে জেতবে, কে হারবে এই নিয়ে বিভিন্ন সংস্থা ইতোমধ্যে শুরু করে দিয়েছে সমীক্ষা। এবিপি সি-ভোটার্স-এর সর্বশেষ সমীক্ষা অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরের প্রথম দিকে অনুষ্ঠিত বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশ, মণিপুর, গোয়া এবং উত্তরাখণ্ডে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। সমীক্ষা অনুসারে, পাঞ্জাবে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পাবে না কোনও দলই। কংগ্রেসের ঘরোয়া কোন্দল উত্তর ভারতের এই রাজ্যটির বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে জটিলতা রয়েছে। সমীক্ষায় দেখা যায় আম আদমি পার্টি (আপ) এবার পাঞ্জাবে বড় সাফল্য পেতে পারে। পাঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং নতুন দল গঠনের ঘোষণা করেছেন। তাঁর দল কোন পথে হাঁটবে তার উপরও অনেকটা নির্ভর করছে পাঞ্জাবের ভবিষ্যত রাজনীতি। তবে সমীক্ষা জানিয়েছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপ তৃতীয় পক্ষ হিসাবে পাঞ্জাব, গোয়া ও উত্তরাখণ্ডে উঠে আসতে পারে। পাশা পাশি সমীক্ষা জানায় পাঞ্জাব এবং মণিপুরের পাশাপাশি অন্য রাজ্যগুলিতেও কংগ্রেসকে বেশ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে।
এবিপি সি-ভোটার্স-এর সর্বশেষ সমীক্ষা বলছে, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বাধীন বিজেপি উত্তরপ্রদেশে নানাবিধ সমালোচনা সত্ত্বেও ৪১.৩ শতাংশ ভোট পেয়ে আবারও ক্ষমতায় ফেরতে পারে বিজেপি। অপরদিকে অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি ৩২ শতাংশ, বহুজন সমাজ পার্টি ১৫ শতাংশ, কংগ্রেস ৬ শতাংশ এবং বাকি রাজনৈতিক দল ও নির্দল প্রার্থীরা পেতে পারে ৬ শতাংশ ভোট। উত্তর প্রদেশের এই রাজ্যে ২০১৭ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিজেপি ৪১.৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এমনকি ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনেও সেই একই ভোট অঙ্ক ধরে রাখতে পেরেছিল বিজেপি। এবিপি সি-ভোটার্স-এর সমীক্ষা জানায়, উত্তরপ্রদেশের বর্তমান শাসক দল আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে ২৪১ থেকে ২৪৯টি আসন পেতে পারে। সমাজবাদী পার্টির ১৩০ থেকে ১৩৮টি, মায়াবতীর বিএসপি ১৫ থেকে ১৯টি এবং কংগ্রেস পতে পারে ৬ থেকে ৭টি আসন।
অপরদিকে পাঞ্জাবে ১১৭ সদস্যের বিধানসভা নির্বাচনে আপ একটি বড় সুবিধা পেয়ে অর্থাৎ পাঞ্জাবে মোট ভোটের ৩৬ শতাংশ ভোট পেয়ে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বাধীন আম আদমি পার্টি (আপ) একক বৃহত্তম দল হতে পারে বলে এবিপি সি-ভোটার্স-সমীক্ষা বলছে । কংগ্রেস পেতে পারে ৩২ শতাংশ, শিরোমণি আকালি দল (এসএডি) ২২ শতাংশ, বিজেপি ৪ শতাংশ এবং অন্যান্যদের ৬ শতাংশ ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আসনের দিক থেকে, আপ ৪৯ থেকে ৫৫, কংগ্রেস ৩০ থেকে ৪৭, আকালি দল ১৭ থেকে ২৫, বিজেপি ও অন্যান্য দলগুলি খুব বেশি হলে একটি করে আসন পেতে পারে। সমীক্ষা জানিয়েছে, উত্তরাখণ্ড রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে ফের বিজেপির প্রত্যাবর্তন হতে পারে। সি-ভোটার্স সমীক্ষা অনুযায়ী, কংগ্রেস ৩৪ শতাংশ, বিজেপি ৪৫ শতাংশ, আম আদমি পার্টি ১৫ শতাংশ এবং অন্যদল ৬ শতাংশ ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পার্বত্যঞ্চল বেষ্টিত এই রাজ্যটিতে কংগ্রেস পেতে পারে ২১-২৫ টি আসন। ঠিক বিজেপির আসন সংখ্যাটিও দাঁড়াতে পারে ২১ থেকে ২৫-এর মধ্যে। আম আদমি পার্টি ও অন্যান্য দলগুলি পেতে পারে যথাক্রমে ৪ ও ২টি আসন।
অনুসারে, উপকূলীয় রাজ্য গোয়ায় মোট বিধান সভা আসন সংখ্যা ৪০।সমীক্ষা বলছে এই রাজ্যটিতে সর্বাধিক আসনে জিতে বিজেপি আবার সরকার গঠন করতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিজেপির গোয়ায় ২৪ থেকে ২৮টি আসন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেখানে কংগ্রেসের ঝুলিতে যেতে পারে মাত্র ১ থেকে ৫ টি আসন। আম আদমি পার্টির জেতার সম্ভাবনা রয়েছে তিন থেকে সাতটি আসন। অন্যান্যরা পেতে পারে ৪-৮টি আসন। ভোটের শতাংশের ক্ষেত্রে সমীক্ষা জানিয়েছে বিজেপি পেতে পারে ৩৮ শতাংশ ভোট। কংগ্রেস ১৮ শতাংশ, আপ ২৩ শতাংশ এবং অন্যরা ২১ শতাংশ ভোট পতে পারে। গত বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস গোয়ায় একক বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হলেও রাজ্যে সরকার গঠন করতে তারা ব্যর্থ হয়েছিল।
সমীক্ষা বলছে বিধানসভার ৩১টি আসন নিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য মণিপুরে বিজেপি ২১ থেকে ২৫টি আসন পেতে পারে। যেখানে কংগ্রেস পেতে পারে ১৮-২২টি আসন। আঞ্চলিক নাগা পিপলস ফ্রন্ট (এনপিএফ) চার থেকে আটটি এবং অন্যরা এক থেকে পাঁচটি আসন পেতে পারে।তাই সমীক্ষ বলছে, জোট সরকারের পথেই হাঁটেতে হবে রাজ্যটিকে। মণিপুর বিজেপি ৩৬ শতাংশ ভোট পেতে পারে বলে জানিয়েছে সমীক্ষা। যেখানে কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট হতে পারে ৩৪ শতাংশ, এনপিএফ ৯ শতাংশ এবং অন্যান্যরা ২১ শতাংশ ভোট পেতে পারে।