বিজেপির  জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক  

 

নিজস্ব প্রতিবেদন

বিজেপির এখন পাখির চোখ পাঁচ রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে। গত মাসের পশ্বিমবঙ্গসহ কয়েকটি রাজ্যের নির্বাচন নিয়ে চিন্তায় আছেন বিজেপির সর্বোচ্চ নেতৃত্ব। তাই বিভিন্ন বিষয় ছাড়াও নির্বাচনের মুখে  দিল্লিতে অনুষ্ঠিত বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকটির তাৎপর্য রয়েছে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছেন।

বিজেপির এই বৈঠক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল, কারণ আগামী বছরের গোড়ার দিকে উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পঞ্জাব সহ মোট ৫টি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। এর মধ্যে পাখির চোখ করা হয়েছে উত্তর প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনকে, কারণ এই নির্বাচনের ফলা্ফলকে সামনে রেখেই ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের গতিপ্রকৃতি মাপতে চাচ্ছে বিজেপি নেতৃত্ব। এই কারণে বৈঠকে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও উপস্থিত ছিলেন। যদিও এদিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী যোগীর ভার্চুয়াল উপস্থিত থাকার কথা ছিল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আগামী বছর এই পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনকে শুধু বিজেপি নয়, প্রতিটি দলের জন্যই পরীক্ষা হতে চলেছে। আর সেদিক থেকে বিজেপিতো অবশ্যই চাইবে, নিজেদের শক্তি পরীক্ষা করে নিতে। তাইতো দলের সাংগঠনিক শক্তি-বৃদ্ধি নিয়ে বিশদ আলোচনা ছাড়াও ওই বৈঠকে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা  নির্বাচন নিয়ে দলের সাংগঠনিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা হয় এবং দলীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি ও কর্মকৌশল ঠিক করে দেয়া হয়।

গত মাসে হওয়া কয়েকটি রাজ্যের উপনির্বাচনে জোর ধাক্কা খেয়েছে গেরুয়া শিবির। এমনকি পশ্চিমবঙ্গসহ বেশ কিছু আসনে বিজেপি প্রার্থীদের জামানতও বাজেয়াপ্ত হয়েছে। প্রসঙ্গত: বঙ্গের ক্ষমতা দখলের জন্য বিধানসভা নির্বাচনে ব্যাপক প্রচার চালিয়েও বাংলায় শেষ রক্ষা হয়নি বিজেপির। তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন হয়েছে তৃণমূলের। ভোটে হারজিত আছে, তাই বলে  পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজনীতিতে পিছিয়ে পড়তে নারাজ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে। অন্তত দলের রবিবারের কর্মসমিতির বৈঠক থেকে সেই নির্যাসই উঠে এসেছে।

কোভিডের পর  অর্থাৎ দু’বছর পর এই প্রথম বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক বসে দিল্লিতে৷ দিল্লির এনডিএমসি কনভেনশন সেন্টারে এদিন  সকাল ১০ টায়  শুরু হয়  বিজেপির এই জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, ভারতীয় জনতা পার্টির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা।  বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অন্যান্য রাজ্যের মত পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধিরাও৷ তাদের সামনেই জেপি নাড্ডা বলেন, ”পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে আশ্বাস দিতে চাই যে আমরা আপনাদের সঙ্গে থাকব এবং আছি। রাজ্যে আমরা আগামীতে নতুন ইতিহাস রচনা করব।”  তিনি বলেন  “একসময় পশ্চিমবঙ্গে মাত্র তিন শতাংশের কাছাকাছি ভোট ছিল বিজেপির। সেখানে একুশের নির্বাচনে ৩৮ শতাংশ ভোট পেয়েছে বিজেপি। পেয়েছে ৭৭টি আসন। রাজনীতির ছাত্ররাও বিজেপির এই উত্থান মানতে বাধ্য হবেন। বাংলায় আমাদের সংগঠন মজবুত হয়েছে। তাই এখন থেকে বুথস্তরের কর্মীদের মনের কথা শুনতে হবে এবং তাদেরকে বেশী গুরুত্ব দিতে হবে। যদিও আমাদের কর্মীদের ওপর ব্যাপক তৃণমুলী হামলা হয়েছে। ৫৭  জন খুন হয়েছেন। বহু মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে। এখনও আশ্রয় শিবিরে অনেকে কর্মীরা রয়েছে।”   তাই তিনি এদিনের বৈঠকে রাজ্য নেতাদের একটি গাইড লাইনসহ লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেন। আগামী ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বুথ স্তরে সমস্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শেষ করাওর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তবে নির্বাচন ও উপ-নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতাদের কন্ঠে কোন আত্মসমীক্ষার সুর শোনা না গেলেও দলের সর্বভারতীয় সভাপতি বাংলায় বিজেপির ফলাফলের জন্য মূলত: প্রশংসাই করলেনন।

এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গ-র কলকাতা ও হাওড়ায় ১৯ ডিসেম্বর পুরভোট রয়েছে। দীর্ঘকাল পর্যন্ত তৃণমূল পুর না করে ওই সব প্রতিষ্ঠানে নিজেদের লোক প্রশাসক করে বসিয়েছে। তাই এই পুর ভোটের প্রতি বেশী করে ব্যস্ত থাকার জন্য বঙ্গ বিজেপি কার্যকর্তাদের ব্যস্ত থাকার জন্যেও বৈঠকে  পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ‌এই জন্য বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও  বিজেপির রাজ্য সভাপতি ড. সুকান্ত মজুমদারকে রাজ্যে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন দিল্লির নেতৃত্ব। তাই ওইদিনের জাতীয় পর্যায়ের বৈঠকে তারা কলকাতার দলীয় কার্যালয় থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়েছিলেন। বৈঠক শেষে সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ সাংবাদিকদের জানান, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দলীয় নেতা-কর্মীদের উৎকর্ষতার সঙ্গে এলাকায় এলাকায় জনসংযোগের প্রতি গুরুত্ব দেয়ার কথা বলেছেন। শুধু রাজনীতিই নয়, এলাকায় সামাজিক গুরুত্বের কথাও বিচার করতে হবে।”