গত পাঁচ দশকেও মো: আব্দুল হামিদের সন্তনরা ‘শহীদ সন্তান’-র মর্যদা পায়নি ?
প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফরিয়াদ পরিবারের
আবুল কাশেম পলাশ
বাংলার সবুজ সুনিবীর শ্যামল প্রান্তরে ঘুমিয়ে আছেন লাখো ‘শহীদ মুক্তিসেনা’- যাদের বুকের রক্তে গড়া আজকের বাংলাদেশ । তাদের-ই একজন সার্বভৌম বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান মোঃ আব্দুল হামিদ।যিনি নিজের মাতৃভূমিকে স্বাধীন করতে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। দেশটির জন্য উৎসর্গ করেছিলেন নিজেকে। এই অপরাধে পাক-হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার মোঃ আব্দুল হামিদ ও তাঁর স্ত্রী জেবুন্নেসা বেগমকে তাঁর সরকারি বাস ভবন থেকে জোড় করে ধরে নিয়ে যায়। তারা দপ্মতিকে ব্যাপকভাবে নির্যাতন করে। তাদের এই নির্মম নির্যাতনের দৃশ্য তাঁর দু’টি শিশু কন্যা ও পুত্র নির্বাক দৃষ্টিতে দেখলেও তাদের বাবা-মাকে যে কখনও আর ফিরে পাবেনা সেইটা ওই অবুঝ বয়সেও বুঝতে পারেনি তারা। শুধু নির্বাক নয়নে বাবা মা-র নির্মম আহাজারী দেখতে হয়েছিল তাদের। সেই সময় মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদের বড় কন্যা রাজশাহীতে তার নানার বাড়িতে ছিলেন। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মো: আব্দুল হামিদ তখন পূর্বপাকিস্তানের একজন সিভিল সার্ভিস অফিসার। ছিলেন। ১৯৭১ সালে ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার সার্কেল অফিসার (উন্নয়ন) হিসাবে কর্মরত ছিলেন।
২৬ নভেম্বর দৌলতখান উপজেলা পাক-হানাদারমুক্ত হলে থানার পার্শ্ববর্তী দুটি বাংকার থেকে আব্দুল হামিদ ও তাঁর স্ত্রীর ক্ষত-বিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার করেন স্থানীয় জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধারা।। গুলি ও বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে অত্যান্ত নির্মমভাবে তাদের হত্যা করা হয়। আসুরিক এই হত্যাকান্ডের নজির সভ্য দুনিয়ার ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
১৯৭২ সালের ১৩ এপ্রিল মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সংস্থাপন শাখা “জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদেশে” গভীর শোকগাথা গেজেট আকারে প্রকাশ করেন, যা আজও সমুদ্রসম কষ্ট ও চোখের জলে স্মৃতির পাতায় রেখেছেন তার সন্তানেরা। অত্যান্ত দুঃখের বিষয়, দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫০ বৎসর পার হতে চলল অথচ “শহীদ মুক্তিযোদ্ধা” গেজেটে আজও এই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম তালিকাভুক্ত হয়নি। সেই দিন ছিল তাদের মেজ কন্যা নাহিদী ইয়াসমীন রুলীর জন্মদিন। প্রতি বছর সে আশায় থাকে, এবার বুঝি তার বাবা ও মা তাদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি পাবে! কিন্তু প্রতিবছরই সে হতাশ হয়। তার বাবা-মায়ের আত্মত্যাগ আর তাদের চার ভাই-বোনের কষ্টের কোনো মূল্যায়ন হয় না। তাদের কষ্টের পাহাড় দিনে দিনে বড় হয়। এই কষ্টের সাথে যোগ হয় আরও কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত কষ্ট।
এতিম এই চার সন্তানদের জন্য তাদের বাবার রেখে যাওয়া একমাত্র সম্পদ, এক টুকরো জমি, যা কিছু ভূমিদস্যু জাল কাগজপত্র তৈরি করে দখল করে। এই ভূমিদস্যুরা রাজনৈতিক নেতা।এই মাটির সূর্য সন্তানদের অস্তিত্ব মুছে ফেলতে অঙ্কুরিত হচ্ছে অপশক্তির বীজ নরঘাতকরা। এরা সুতার রঙের মতো রঙিন ও ভদ্রতার জাল সনদ নিয়ে তকমা বদলিয়ে, দলীয় পদ-পদবি বাগিয়ে, অবৈধ ভাবে চোরা গলিতে বসে সুকৌশলে নিরীহ মানুষদের ভিটা-বাড়ি, জমি দখল করে সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে তুলছে যা দেখার কেউ নাই। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর, অধিদপ্তর, জনপ্রতিনিধি এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা থাকলেও এহেন কর্মকান্ডে “বাঘের গর্জন” নাই, আছে আপোষকামিতা। তাহলে ভূমিদস্যু, ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজদের অপসংস্কৃতির লাগাম কে ধরবে? স্টেশনের কুলি, বাস ট্রাক স্ট্যান্ডের চাঁদাবাজ, রাজমিস্ত্রীর জোগালি এখন সমাজের নীতিনির্ধারক।শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুল হামিদ ই পি সি এস, সার্কেল অফিসার (উন্নয়ন) দম্পতির রাজশাহীর রামচন্দ্রপুর মৌজার বাসার রোডে এক খন্ড জমি অপশক্তির বীজ হায়নারা ২০১৬ সালে প্রাচীর ভেঙে দখল করে নিয়েছিল। শহীদ পরিবারের এতিম সন্তানরা এর প্রতিকার চেয়ে সরকারের সকল পর্যায়ে এমন কি জনপ্রতিনিধিদেরকেও এই অন্যায়ের বিষয়ে অবগত করে। ন্যায় বিচারের প্রত্যাশায় আইনের আশ্রয় গ্রহন করে যার মীমাংসা আজও হয়নি। তাহলে কী নাহিদী ইয়াসমীনদের মতো এতিম সন্তানদের দায় মোমবাতি হাতে ঐ জমির সামনে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকা?চেতনার সরকার এই সকল অপশক্তিকে দমাতে না পারলে টেকসই উন্নয়নের সকল অর্জন ম্লান হয়ে যাবে। লাল সবুজের বাংলা অন্ধ-কানাদের হাটে কালো চশমার ঘাতকদের বা ভূমিদস্যুদের নয়। এই বাংলা লাখো মুক্তিযোদ্ধার রক্তের বাংলা।অক্সিজেনের সরবরাহ বৃদ্ধিতে প্রকৃতির সাথে সন্ধি করে সবুজ চত্বর গড়ে তুলতে হয়। তেমন সুস্থ সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ভূমিদস্যু, জলদস্যু, চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিবাজদের রুখতে “তৃতীয় নয়নকে” কার্যকর ও শক্তিশালী ভুমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। তাহলে আমাদের নতুন প্রজন্মের জালে বদলে যাবে ক্ষয়িষ্ণু সমাজ ব্যবস্থা। সৃষ্টি হবে শ্রদ্ধাবোধ ও এই মাটির প্রতি ভালোবাসা, যা হবে মনুষ্যত্বের গয়না।
আজ এই দম্পতির শাহাদাৎ বার্ষিকী। যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অচিরেই যেন এই দুই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম “শহীদ মুক্তিযোদ্ধা” গেজেটে তালিকাভুক্ত করা হয়, এবং রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় লালিত ভূমিদস্যুদের কালো থাবা থেকে জমিটা উদ্ধার করে এতিম সন্তানদের বুঝিয়ে দেয়া হয়।