নিজস্ব প্রতিবেদন
বিএসএফের এক্তিয়ার বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের বিরূদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিমকোর্টে মামলা করেছে পাঞ্জাব সরকার। রাজ্যগুলোর সাথে কোন রকমের আলোচনা না করেই বিএসএফের এক্তিয়ার নিয়ে একতরফা সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় সরাকার । এর আগে গত ১২ নভেম্বর কেন্দ্রীয় সরকারের ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে পাঞ্জাব বিধানসভায় প্রস্তাবও পাস হয় ।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার বিজ্ঞপ্তি পজারী করে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সীমান্তে এলাকাগুলোতে বিএসএফ এর কর্মক্ষেত্রের পরিধি ৫০ কিলোমিটার বৃদ্ধি করা হয়েছে, এর আগে ছিল ১৫ কিলোমিটার। ফলে পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব এবং আসামে বিএসএফ এর কর্মক্ষেত্রের পরিধি ১৫ কিলোমিটার থেকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত করা হয়েছর। অন্যদিকে গুজরাত রাজ্যে আগে ছিল ৮০ কিলোমিটার কিন্তু তা কমিয়ে পরিধি করা হয়েছে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত। বিজেপি সরকারের বিএসএফ-র ওই এক্তিয়ার বৃদ্ধি নিয়ে আপত্তি জানায় পশ্চিমবঙ্গব ও পঞ্জাব রাজ্য। এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায়ও তৃণমুলের পক্ষথেকে একটি প্রস্তাব পাস হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তে রাজ্যের অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ করার আশঙ্কাপ্রকাশ করেছে দুই রাজ্যই। যদিও বিরোধীদের এমন আশঙ্কা ভিত্তিহীন বলেই লোকসভায় লিখিত উত্তরে জানায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
বিএসএফের ক্ষমতা বৃদ্ধি নিয়ে বিজেপিকে নিশানা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছিলেন যে, ’ বিএসএফ আমার শত্রু নয়। বিজেপি যেভাবে মনে করছে, বিএসএফ মানে বিজেপিরনিরাপ ! এটা ঠিক নয়’। এবিষয় জানিয়ে ইতিপূর্বে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও দিয়েছিলেন মমতা বন্দোপাধ্যায়।। বিএসএফ-এর কর্মক্ষত্রের পরিধি বাড়ানোর বিরোধিতায় একটি প্রস্তাবও পাশ হয়েছিল রাজ্য বিধানসভায়।
এদিকে এই ইস্যুতে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় বলেছেন, “প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর বিএসএফ নিয়ে মন্তব্যকে সমর্থন করি না। প্রয়োজন হল পুলিশ-বিএসএফ একসঙ্গে কাজ করুক। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী কেন সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছেন?’’ কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিয়েছিলেন।
এবার সংবিধানের ১৩১ ধারার অধীনে কেন্দ্রের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে পাঞ্জাব সরকার সুপ্রিমকোর্টে মামলা করে। মামলার আবেদনে বলা হয়, বিএসএফ-র এক্তিয়ার বাড়ানোর কারণে রাজ্যের সাংবিধানিক অধিকারকে খর্ব করা হয়েছে। তারা জানিয়েছে, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের প্রভাবে পাকিস্তান সংলগ্ন জেলাগুলোর ৮০ শতাংশ বিএসএফ-এর হাতে চলে যাবে। অথচ, ভারতীয় সংবিধান রাজ্যগুলোর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং পুলিশের দায়িত্ব রাজ্যের হাতে দিয়েছে। বিএসএফ-র এই পরিধি বৃদ্ধি নিয়ে রাজ্যপুলিশের মধ্যে সংঘাত শুরু হবে। এই নিয়ে পাঞ্জাব সরকার যে অভিযোগ দায়ের করেছে, তাতে বলা হয়েছে, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একবারও রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করেনি কেন্দ্র।
পাঞ্জাব সরকারের আবেদনে সাড়া দিয়ে শীর্ষ আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে কেন্দ্রকে একটি নোটিশ পাঠিয়েছে। ২৮ দিনের মধ্যে এই অভিযোগের জবাব দিতে বলা হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারকে। পাঞ্জাব সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন রাজ্যের কংগ্রেস প্রধান নভজোত সিধু। তিনি বলেছেন, ‘বিএসএফ-এর এক্তিয়ার বাড়ানোকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সবার আগে মামলা দায়ের করার জন্য পাঞ্জাব এবং তার আইনি দলকে অভিনন্দন।’