নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা পুরসভার ১৬টি বরোর ১৪৪টি ওয়ার্ডের ভোট গণনায় মঙ্গলবার রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণ হয়েছে  সাড়ে ৯০০ প্রার্থীর। গণনা শেষে ১৪৪টির মধ্যে ১৩৪টি আসনই তৃণমূলের দখলে গিয়েছে। মূলত কলকাতা পুরভোটে তৃণমূল কংগ্রেসের জয়জয়কার। রীতিমতো রেকর্ড গড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। উত্তর কলকাতা থেকে দক্ষিণে  বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম কোনও বিরোধী দলই পুরভোটে তৃণমূলের ধারে কাছেও নেই। একচেটিয়া দাপট দেখিয়ে জেতার এমন ভোট আগে দেখেনি কলকাতা।

এবারের পুর ভোটে প্রায় ১৩ শতাংশ ভোট বৃদ্ধি করে কর্পোরেশনের লালবাড়ি দখল করলো  ঘাসফুল শিবির।  কলকাতা পুরভোটের ফলাফলের ট্রেন্ডে দেখা গেছে তৃণমূলের ভোট বেড়ে ৭১ শতাংশ  হয়েছে ।  অপর দিকে বিজেপির ভোট কমে হয়েছে ৮.৯ শতাংশ। গত বারের চেযে বিজেপি-র ভোট কমেছে প্রায় ২৩ থেকে ২৪ শতাংশ। এই ২৩ থেকে ২৪ শতাংশ ভোটের একটা সিংহভাগ অংশ তৃণমূলের দিকে গেলেও একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আবা্র গেছে বামেদের দিকে। ফলত বামেদের ভোট শতাংশের হারে ৪ থেকে বেড়ে হয়েছে ১১.৪ শতাংশ। মোট কথা কলকাতা পুরসভায় অস্তিত্ব রক্ষা করল গত বিধানসভা ভোটে শূন্য হয়ে যাওয়া বাম ও কংগ্রেস। গত বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে ২১৩টি আসনে জয়ী হয় তৃণমূল। প্রায় ৪৮ শতাংশ ভোট পায় তারা। বিজেপি জয়ী হয় ৭৭টি আসনে। ৩৮ শতাংশ ভোট পায় গেরুয়া শিবির। বিধানসভা ভোটের  ৬ মাস পরে ফের বড় ধাক্কা খেল বিজেপি।মোট কথা ভোট শতাণশ হারে ৬৫টি ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্থানে বামেরা, ৪৮টিতে বিজেপি, ১৬ আসনে রয়েছে কংগ্রেস।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পুরসভার ভোটে রাজ্যের শাসকদলের এমন একচেটিয়া দাপট আগে কখনও দেখেনি কলকাতা। অতীতে বামেরা যখন ক্ষমতায়, তখনও কলকাতা পুরসভার ভোটে শাসক-বিরোধী লড়াই হয়েছে সেয়ানে সেয়ানে।

নির্বাচনে পূর্বের ১৩ জন মেয়র পারিষদের সবাই জিতেছেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেবাশিস কুমার, তারক সিংহ, দেবব্রত মজুমদার, রাম পেয়ারি রাম। পুরভোটে প্রার্থী হওয়া সাংসদ মালা রায় এই নিয়ে টানা ষষ্ঠবার জিতলেন। কলকাতা পুরসভার ৪ নম্বর বরোর অন্তর্গত ২২ নম্বর ওয়ার্ড টি বরাবরই  বিজেপির শক্ত ঘাঁটি। যেই কটা স্থানে বিজেপি পায়ের তলার জমি শক্ত করতে সমর্থ হয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম হল কলকাতার বড়বাজার এলাকা। এই বড়বাজারের পোস্তা এলাকার এই ওয়ার্ডেই গত আড়াই দশক ধরে কাউন্সিলর পদে থেকেছেন বিজেপির মীনাদেবী পুরোহিত। এবারও তিনি জিতলেন এক হাজারের বেশি ভোটে। ষষ্ঠবারের জন্য কাউন্সিলর পদে জিতে তাঁর বার্তা এটা সাধারণ মানুষ ও বিজেপি কর্মীদের জয়। জয়ের হ্যাটট্রিক করলেন বিজয় ওঝা। প্রথমবার কঠিন লড়াই করে  ৫০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতেছেন বিজেপির সজল ঘোষ। কংগ্রসের গড়রক্ষা করেছেন কংগ্রেজ প্রাথী সন্তোষ পাঠক। চমক দিয়েছেন ১৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী ওয়াসিম আনসারি। ৯২ নম্বর ওয়ার্ড ধরে রেখেছেন সিপিআইয়ের মধুছন্দা দেব।

গৃহিণী থেকে বিধায়ক হয়েছেন শোভনদেব-র স্ত্রী রত্না চাটার্জী। এবার কাউন্সিলরও। একসময়ে স্রেফ মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ঘরণী, রত্না চট্টোপাধ্যায়ের নেম প্লেটে যোগ হল আরও একটি পরিচিতি।শোভনদেবের সাথে পারিবারিক সম্পর্ক টানা-পেরনের মাঝেই বিধায়ক হওয়ার সাত মাসের মধ্যে শোভনের ছেড়ে যাওয়া ওয়ার্ড থেকে ভোটে জিতে কাউন্সিলর হয়েছেন রত্না।

পুরভোটের এমন ফলাফলে খুশী তৃণমূল নেত্রী। মঙ্গলবারই গুয়াহাটি যাচ্ছেন তিনি। কালীঘাটের বাড়ি থেকে বিমানবন্দর যাওয়ার আগে সংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কলকাতা বাসী তথা মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেন, “আমি সকল মানুষ ও ভাই-বোনদের প্রণাম, অভিনন্দন এবং সেলাম জানাই। গণ উৎসবের মতোই এই নির্বাচন হয়েছে। গণতন্ত্রের জয় হয়েছে। আমরা মা-মাটি-মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ। আপনারা যত আশীর্বাদ দেবেন, তত মাথা নত করে কাজ করব। কলকাতা আমাদের গর্ব। বাংলা আমাদের গর্ব। কলকাতা এবং বাংলাই দেশকে পথ দেখাবে।” পাশাপাশি এদিন একযোগে বিজেপি, কংগ্রেস এবং বামেদেরও কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম মানুষের ভোটে হেরেছে। আমরা মাটির কাছাকাছি থাকা মানুষ। তাই এই ফলাফলে বিজেপি ভোকাট্টা, সিপিএম নোপাত্তা। কংগ্রেস স্যান্ডউইচ হয়ে গিয়েছে।”

বাংলায় ঘৃণা ও হিংসার রাজনীতির কোনও স্থান নেই, কলকাতার মানুষ তা আবারও দেখিয়ে দিয়েছেন’, ‘এই বিপুল সমর্থনের জন্য প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

মঙ্গলবার বিকেলে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “কলকাতা ও হাওড়ায় তৃণমূল বেশি শক্তিশালী। সেই কারণেই এখানে আলাদা করে আগে ভোট করানো হয়েছে। আপনারা জেলার দিকে গেলে দেখবেন, অনেক জায়গায় আমরা শক্তিশালী। শিলিগুড়ি বা আসানসোল বোর্ড আমরা দখল করব। সেগুলিতে তারা ভোট করালেন না। মানুষের কাছে একটা ভূল বার্তা তৈরি করা হচ্ছে, যে বিজেপি নয়, সিপিএম প্রধান বিরোধী।” তিনি বলেন, “আমরা গ্রামাঞ্চলে অনেক বেশি শক্তিশালী কলকাতার  চেয়েও।