প্রণব ভট্রাচার্য্য
নতুন বছরে পা দিতেই ভোটের পারদ চড়ছে। আগামী দু-এক মাসের মধ্যেই উত্তর প্রদেশ সহ পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে। করোনার বাড়বাড়ন্তের জন্য ভোট নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা তৈরি হলেও, জাতীয় নির্বাচন কমিশনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, করোনা বিধি মেনেই নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করাতে আগ্রহী উত্তর প্রদেশের সমস্ত রাজনৈতিক দল। তাদের কথা মাথায় রেখেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকেও ভোটের জন্য তারা প্রস্তুত বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
৪০৩টি আসনের উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন ঘিরে যেখানে প্রচারে কোনও খামতি রাখছে না বিজেপি, সমাজবাদী পার্টি, কংগ্রেসের মতো দলগুলি, সেখানে একসময় রাজ্যের শাসকদলের ক্ষমতায় থাকা বহুজন সমাজ পার্টিই প্রচারের আলো থেকে অনেক দূরে। রাজনীতির ময়দান থেকে উধাও মায়াবতীর দলটি । বাকি রাজনৈতিক দলগুলি তারকা প্রার্থীদের দিয়ে প্রচার সারলেও এখনও ময়দানে দেখাই যায়নি বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতী কে। মায়াবতীর অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাকি দলের নেতৃত্বরাও। ৪০৩টি আসনের উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন ঘিরে যেখানে প্রচারে কোনও খামতি রাখছে না বিজেপি, সমাজবাদী পার্টি, কংগ্রেসের মতো দলগুলি, সেখানেই একসময় রাজ্যের শাসকদলের ক্ষমতায় থাকা বহুজন সমাজ পার্টি মূলত প্রচারের আলো থেকে অনেক দূরে।
দলিতদের অধিকার পাইয়ে দেওয়ার দাবিকে সামনে রেখেই তিনবার মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসলেও, বিগত কয়েক বছর ধরেই দলিতদের নিয়ে কোনও ইস্যুতেই মায়াবতীকে কথা বলতে দেখা যায়নি। এই প্রসঙ্গে জাতব মহাপঞ্চায়েতের প্রেসিডেন্ট রামবীর সিং করদম বলেছিলেন, “বিএসপির প্রতিষ্ঠাতা কাশীরামের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই দলিতদের নিয়ে আর সেরকম কথা বলছেননা মায়াবতী।” মায়াবতীর অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী-ও। তিনিও দিল্লিতে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “আমি বুঝতে পারছি না বহুজন সমাজবাদী নেত্রী মায়াবতী ভোটের হট সময় কেন চুপ করে রয়েছেন?” অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত, তিন তিন বার উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসার পর মায়াবতী যে সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছিলেন, সেখান থেকে পতন হওয়ার পর “বিরোধী নেত্রী”র তকমা তিনি ভালভাবে নেননি। সেই কারণেই উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদ খোয়ানোর পর মাঠে-ময়দানে নেমে প্রচার করেছেন অখিলেশ যাদব। কিন্তু সেখানেই মায়াবতীকে আর দেখা যায়নি। তাকে শেষবার দেখা গিয়েছিল অক্টোবর মাসে, লখনউতে কাশীরামের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে।
ইতোপূর্বে একসাথে লড়ার বার্ত দিয়েছিল বিরোধী দুই শিবির মোহন ভাগবাত-মোলায়েম। কিন্তু হঠাৎ করে ওই দুই শিবির একে অপরের বিরুদ্ধ দাঁড়িয়ে। বদলে দিচ্ছে অনেক কিছু, রাজনৈতিক মহল ভাবছেন তাহলে কী বদলাচ্ছে উত্তর প্রদেশ গড়ের সমীকরণ, না কি বিজেপির দেখে অবস্থান ভালো দেখে এক পা পিছিয়ে দু’পা এগিয়ে যাওয়ার ভাবনা চিন্তায় রয়েছে মুলায়েম সিং যাদব।অনেক আগে থেকেই একটি কথা শোনা যাচ্ছিল লোকসভা নির্বাচনে দেশ জেতাতে গেলে ৪০৩ আসনের উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনে জেতা জরুরি। এই স্ট্রেট্যজী-কে সামনে রেখে ভোটের ময়দানে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিই এখন লক্ষ্য, তাই স্বাভাবিক ভাবেই এই মুহূর্তে ২৪ এর ভোট নিয়ে একেবারেই মাথা ঘামাচ্ছে না বিজেপি ব্রিগেড। বরং তাদের পাখির চোখ এখন উত্তরপ্রদেশে।যদিও বর্তমানে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্য নাথের রাজ্যে ইস্যুর শেষ নেই। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালিন, সারি সারি লাশ, মৃত্যু হাহাকার, লখিমপুরে কৃষক হত্যা, রাম মন্দির নির্মাণ, কৃষক আন্দোলন থেকে বেকাত্বের মত একাধিক ইস্যুতে উত্তাল। কিন্তু সেই সব বিভিন্ন অযাচিত ঘটনাকে চাপা দিচ্ছে বিজেপির রামমন্দির। তাই আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে রামমন্দিরই একটি বড় ইস্যু বিজেপির জন্য।
অন্যদিক এক ইঞ্চি জায়গা না ছাড়ার মনোভাব নিয়ে বারবারই অখিলেশ যাদব বলছেন, বিজেপি তাদের আমলে কি ভুল করেছে সেগুলো মাথায় রাখতে হবে। কারণ লক্ষ্য একটাই, উত্তর প্রদেশের গদি। কংগ্রেস সে রাজ্যে নেই এমনটা নয়। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী অনেক আগে থেকেই প্রচারে নেমে মহিলাদের আকৃ্য্ট করার জন্য অনেক প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছন। তবে সকলেই জানেন এবারের লড়াই কংগ্রেস বনাম বিজেপি নয়, এবারের লড়াই বিজেপির টিকে থাকা বনাম সমাজবাদী পার্টির ফিরে আসা। সকলেই অপেক্ষা করছেন শেষ বাজিতে জিতবে কে? অখিলিশের তুলে ধরা বিজেপির দু:শাসনের চিত্র মানুষের দিক ঘোরাবে নাকি বিজেপির রামমন্দির আর কাশী বিশ্বনাথ মন্দির নির্মানকে প্রাধান্য দেবে? এসবের মাঝেই নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত দিয়েছে একটা ছবি। সম্প্রতি উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কইয়া নাইডুর নাতনির বিয়েতে পাশাপশি এক সোফায় বসে আরএসএস এর মোহন ভাগবত এবং সপার সিনিয়র যাদব।
বিটি প্রথম প্রকাশ্যে এসেছে বিজেপির তরফ থেকে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অর্জুন মেঘয়াল ছবিটি ট্যুইট করেছিলন। ব্যাস তার পরেই কালবিলম্ব না করে রাজনীতির বীজগণিত আর পাটিগণিত নিয়ে জোর কাঁটাছেড়া শুরু হয়ে যায়। কংগ্রেস সুযোগ পেয়েছে হাতের সামনে। কংগ্রেসের তরফ থেকে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে তাহলে কি সমজবাদ মিশে যাচ্ছে সংঘবাদে। বিজেপি আগুনে ঘি ঢেলেছে সুযোগ বুঝে। গেরুয়া শিবির বলছে ছবি বলছে যা বলার তাই। তবে এটি নিশ্চিন্তে একটি ইঙ্গিত বলে মনে করছেননা রাজনৈতিক মহল।উত্তরপ্রদেশে বিরোধীরা লড়াই করবে অবশ্যই, এনসিপি এর সঙ্গে কংগ্রেস টেক্কা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত । কিন্তু মূল লড়াই হবে যাদবের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী যোগীর।