কিশোর সরকার, বাংলাদেশ প্রতিনিধি
ঢাকা (বাংলাদেশ ) : চিন থেকে আমদানি করা হয়েছে এমন নিষিদ্ধ পণ্যে ছয়লাপ বাংলাদেশ। ওই সমস্ত পণ্যের ব্যবহারে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বাংলাদেশের যুবসমাজ। এতদিন পর্যন্ত চিন থেকে বাংলাদেশে যৌনতার সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরণের সামগ্রী আমদানি হলেও এখন গোপনে আমদানি হচ্ছে আতশবাজি, ফানুশ–সহ নানা ধনের ক্ষতিকর নিষিদ্ধ পণ্য। বিকৃত যৌনরুচির চিনা সামগ্রী ব্যবহার করে ইতিমধ্যেই হত্যাকান্ডের মতো ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে। আবার তেমনই চিন থেকে আমদানি করা নিম্নমানের যৌন উত্তেজক ভায়াগ্রা ট্যাবলেট খেয়ে ব্রেইন স্টোক, হার্ট এটাক–সহ মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে তরুণ ও তরুণীরা। বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেমন ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপে কিংবা গুগলে সার্চ দিলেই অহরহ মেলে যৌনতার সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন। বিকৃত যৌনরুচির কাজে ব্যবহৃত এসব পণ্য মিলছে খুব সহজেই। যে কেউ ঘরে বসেই অনলাইন অথবা ফোনকলের মাধ্যমেই মারাত্মক ক্ষতিকর এসব পণ্য হাতে পেয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও চিন থেকে অবৈধ ভাবে আমদানি করা আতশবাজি ও ফানুশে জ্বলছে বাংলাদেশ। ইংরেজি নববর্ষের রাতেই আতশবাজির বিকট শব্দে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আর ফানুশে ঢাকা শহরেই ১১টি বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। এই সমস্ত ঘটনার পর পুলিশ ও প্রশাসনের তৎপরতা বৃদ্ধি পেতেই চিনের এই সমস্ত পণ্য বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে, গোপন অর্ডারের মাধ্যমে। অনেক ক্ষেত্রেই টাকা প্রদান করা হচ্ছে অনলাইনে।
বাংলাদেশে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া চিন থেকে আমদানি করা এই সমস্ত নিষিদ্ধ পণ্যের কারণে বিনাশের পথে এগিয়ে যাচ্ছে যুবসমাজ। আর নিষিদ্ধ পণ্য আমদানির মাধ্যমে পাচার হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের কোটি কোটি বৈদেশিক মুদ্রা।চিনের এই সমস্ত পণ্যের কু–প্রভাবের বিষয় নিয়ে ভিওসি-র বাংলাদেশ প্রতিনিধি কিশোর সরকারের সঙ্গে মতামত বিনিময় করেছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। এই প্রতিনিধির সাথে কথা বলার সময় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের ইসলামী চিন্তাবিদ, সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার ও পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের শীর্ষ কর্তারা। সকলেই চিনা পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন। সম্প্রতি ঢাকায় ধর্ষণের পর মৃত্যু হয় মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের এক ছাত্রীর। ওই ছাত্রীর শরীরে ফরেন বডি অর্থাৎ সেক্স টয় ব্যবহার করা হয়েছিল। যে কারণে যৌনাঙ্গ ও পায়ুদ্বার ফেটে গিয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয় বলে ময়নাতদন্তে উঠে আসে। ওই ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনার সূত্র ধরে চিনা সেক্স টয় বিক্রি চক্রের কয়েকজনকে গ্রেফতার করে বাংলাদেশের পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার মনিটরিং এবং সাইবার ইনভেস্টিগেশন টিম।
এ–ব্যাপারে ইসলামী চিন্তাবিদ বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্য জোটের সভাপতি মিছবাহুর রহমান বলছেন, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও বাঙালি জাতির নিজস্ব সংস্কৃতি থেকে অনেক দূরে সরে যাওয়ার কুফল হিসেবে এতটা নৈতিক অবক্ষয় দেখা যাচ্ছে। আর চিন তো বেণিয়া বাংলাদেশের সব মানুষ মেরেফেলেও যদি টাকা পাওয়া যায় তা তারা করবেই। চিনা পণ্যের এই কু–প্রভাব থেকে নতুন প্রজন্মকে বাঁচাতে হলে আমাদের সংস্কৃতি ও সভ্যতা ধরে রাখতে হবে। আধুনিকতার নামে সবকিছুতে গা ভাসিয়ে না দিয়ে আপন সংস্কৃতিমুখী করতে হবে সবাইকে। চিন বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি যুবসমাজ ধ্বংসের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে দাবি করেন তিনি।
সিআইডির সাইবার ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশন্সের বিশেষ পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুল আলম বলেন, বিভিন্ন ওয়েবসাইটে সেক্স টয় বিক্রি হয়। মোবইল ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করলে তাদের ডেলিভারিম্যান সেক্স টয় বাড়িতেই পৌঁছে দেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লোভনীয় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে এসব পণ্য বিক্রির কার্যক্রম চালাচ্ছে তারা। যেমন, লাইকি, টিকটক ব্যবহার করে একটি ক্লোজ গ্রুপ তৈরি করে হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও ডিজে পার্টির আড়ালে এই ধরনের কর্মকাণ্ড চলে। তবে এ সব বন্ধে চেষ্টা চলছে।
বাংলাদেশের একটি সংবাদ সংস্থার সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার তৌহিদুজ্জামান তন্ময় বলেন, সেক্স টয়, বিভিন্ন প্রকার যৌন উত্তেজক ওষুধ, আতশবাজি, ফানুস চিন থেকে ঢাকা হজরাত শাহজালাল বিমানবন্দর ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে আমদানি করা হয়। কখনও খেলনা কখনও আবার বড়দিনের সরঞ্জাম বলে আমদানি হয়। কাস্টমসের একটি অসাধু চক্র ভিতর থেকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করে। তাই এটা বন্ধে কাস্টমসের পাশাপাশি সবকটি গোয়েন্দা সংস্থাকে তৎপর হতে হবে। তিনি বলেন, দেশে চিনের এই সমস্ত নিষিদ্ধ পণ্য আমদানি বন্ধ করতে না পরলে শুধু খুচরা বিক্রেতাদের গ্রেফতার করে এই ব্যবসা বন্ধ করা যাবে না। চক্রটি চিন থেকে আমদানি করে তা দেশের বিভিন্ন স্থানে খুচরা বিক্রেতার কাছে পৌঁছে দিচ্ছে এ সব নিষিদ্ধ পণ্য। আমদানির আড়ালে পাচার হয়ে যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু (এমপি) বলেন, নিষিদ্ধ এই সমস্ত পণ্য যাতে মিথ্যে তথ্য দিয়ে আমদানি না–হতে পারে সে ব্যাপারে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আরও কঠোর হওয়ার আহবান জানাচ্ছি। এই সমস্ত সেক্স টয় যুবসমাজের যেমন বিনাশ করবে তেমনই না–বুঝে যৌন উত্তেজক ওষুধ খেলে স্বাস্থ্যের মারাত্মক বিপদ হতে পারে। আর আতশবাজি ও ফানুসের জন্য আমাদের বাড়ি–ঘর আগুনে পুড়ে ছাই হতে পারে। যা ইংরেজি নববর্ষের রাতে হয়েছে।
যুব সমাজকে রক্ষা করতে হলে এ ব্যাপারে অবিলম্বে বাংলাদেশ সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন ।