মো: আব্দুর রহিম,
বেনাপোল সিমান্ত : ভারতের কন্নাটকের হিজাব কান্ডের জেরে বাংলাদেশের যশোরে একটি মেতিক্যাল কলেজে সবাইকে হিজাব পরা বাধয়তামুলক করার ঘোষনায় তোলপাড়ের সৃস্টি হয়েছে।যশোরের আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিক্যাল কলেজে সব ধর্মের শিক্ষার্থীদের জন্য হিজাব বাধ্যতামূলক করেছে কর্তৃপক্ষ। ২০১০ সালের ৪ অক্টোবর হাইকোর্ট এক রায়ে বলেছে, বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে কোনও ব্যক্তিকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্মীয় পোশাক পরতে বাধ্য করা যাবে না। তবে এই আদেশ অমান্য করে চলেছে বাংলাদেশের আকিজ গ্রুপ পরিচালিত আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিক্যাল কলেজ। তারা প্রতিষ্ঠানে ড্রেস কোড হিসেবে হিজাব বেছে নিয়ে হাই কোর্টের রায়কে অবমাণনা করছে।
বাংলাদেশের যশোরে আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিক্যাল মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রীদের ড্রেস কোড হিসেবে হিজাবকে বেছে নেওয়ায় সব ধর্মের শিক্ষার্থীরা সেখানে হিজাব পরতে বাধ্য হচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে কলেজটির একজন চিকিৎসক দাবি করেন, তারা একে হিজাব বলেন না। এটাকে প্রতিষ্ঠানের ‘ড্রেস কোড’ হিসেবে দেখা গণ্য।
যশোরের পুলের হাটে আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনের পরিচালনায় কার্যক্রম চালানো আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিক্যাল কলেজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক ছাত্রী জানান, তাদেরকেও হিজাব পরেই ক্যাম্পাসে যেতে হয়।
কারণ কী- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাদের ভর্তির সময় স্বাক্ষর করে নেওয়া হয়েছিল যেন ড্রেস কোড মেনে চলি। এ জন্য চাইলেও আমাদের প্রতিবাদ করার সুযোগ নেই।’
অন্য এক ছাত্রী বলেন, ‘আসলে কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরূদ্ধে আমাদের কিছু বলার সুযোগ নেই। ভয়ের মধ্যে থাকতে হয়। তাই আমরা কোনও ধরনের প্রতিবাদ করি না। বাবা-মা টাকা খরচ করে এখানে ভর্তি করে। ফলে অনেক কিছুই মেনে নিতে হয় আমাদের।’মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি তাদের প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্ত। সবাই এটি মেনে নিয়েই সেখানে পড়াশোনা করছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা সুব্রত বসাকও এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘২০১১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই নিয়ম চালু রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্তের কারণে।’হাইকোর্টের রায়ের পরও এ ধরনের আদেশ কীভাবে জারি করা হয় জানতে চাইলে ভয়েস অব ক্যালকাটাকে তিনি কোন তথ্য না দিয়ে তিনি এই প্রতিনিধির ফোন কেটে দেন। মেডিক্যাল কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা শেখ মহিউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করনেনি। শেখ মহিউদ্দিন ছাত্রজীবনে বাংলাদেশের বরিশাল মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রশিবিরের নেতা ছিলেন এবং ছাত্র সংসদে ভিপি প্রার্থী ছিলেন।
মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির জন্য দেওয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে চিকিৎসক সালাহউদ্দিন খানের দাবি, ‘এটা কলেজের ড্রেস কোড। এটাকে হিজাব বলা ঠিক হবে না। অন্য ধর্মের সবাই এই ড্রেস কোড মেনেই ক্লাস করছে। কেউ আপত্তি করেনি’ড্রেস কোড হিসেবে যে পোশাক বেছে নেওয়া হয়েছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী যেটি পরা যায় না- এমন বিষয় স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বলেন, ‘এটা আপনারা ভুল করছেন। এটাকে আমরা ড্রেস কোড বলছি। হিজাব নয়।’
২০১০ সালের ২২ আগস্ট বাংলাদেশের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাদ্যতামূলক বোরখা পরানোর বিষয় সংবাদ প্রচার হলে সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আদালতে জনস্বার্থে রিট আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত বলে, ‘ধর্মনিরপেক্ষ দেশে কোনও ব্যক্তিকে কোনও ধর্মীয় পোশাক পরতে বাধ্য করা যায় না। সব মানুষের নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার রয়েছে। কোনও ধর্মীয় পোশাক কারও ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না’ বলে উচ্চ আদাল রায় দেয়।বাংলাদেশের আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিক্যাল কলেজে হিজাব বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. এ কে এম আহসান হাবীব বলেন, ‘বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর, আমাদের কাছে এ বিষয়ে কোনও লিখিত অভিযোগ আসেনি। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখব এবং এ ধরনের অভিযোগ পেলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’।