উপ-নির্বাচনে  এবার  লড়াই হবে ত্রিমুখী, টক্কর হবে সমানে সমান

নিজস্ব প্রতিবেদন      

পশ্চিমবঙ্গে   ভোটপর্ব লেগেই আছে । এবার ভোট হবে বালিগঞ্জের বিধানসভা ও আসানসোল লোকসভা আসনের জন্য উপ-নির্বাচন। উপনির্বাচন হলেও রাজনৈতিভাবে রাজ্য রাজনীতিতে এই নির্বাচনের গুরুত্ব রয়েছে। কেননা তিন দলেরই হেভিওয়েট প্রার্থীরা এই উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্নর হবেন।ভারতের নির্বাচন কমিশনের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আগমী ১২ এপ্রিল ওই দুই আসনে ভোটের দিন ঘোষণা করা হয়েছে।বালিগঞ্জ বিধানসভার তৃণমূল-র বিধানসভার সদ্স্য ও মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর খালি হয়ে গিয়েছে বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রটি, তখন তৃণমূলে যোগ দেয়ার পর আসানসোলের বিজেপি সাংসদ ও কেন্দ্রীয় বাবুল সুপ্রিয় ইস্তফা দিয়ে তৃণমূলে যোগ দেয়ায় খালি হয় আসানসোল লোকসভা আসনটিও। মূলত: এই দুটি খালি আসনে উপনির্বাচ হচ্ছে।

তৃণমূলের তরফে ইতিমধ্যেই ওই দুই আসনের জন্য তাদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তৃণমূল বালিগঞ্জের জন্য বিজেপি থেকে দলবদল করে তৃণমূলে আসা প্রাক্তন সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়কে এবং আসান সোলের জন্য লোকসভার সদস্য পদে বলিউডের প্রখ্যাত শিল্পী শত্রুঘ্ন প্রসাদ সিনহা-কে মনোনয়ন দেয়ার কথা ঘোষণা করেছে তারা।  মুলত: শত্রঘ্ন প্রসাদ সিনহাও এক সময়ের বিজেপির সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন। তিনি ২০২১-র বিধানসভা নির্বাচনের সময় তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। কিন্তু বিজেপি থেকে আসা এই দু’জন প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেয়ার প্রশ্নে দলের অন্দরে কিছুটা অসন্তোষ বিরাজ করছিল। দলের অনেকের বক্তব্য,দলে অনেক যোগ্য লোক থাকতেও কেন বিজেপি থেকে দলবদলু  দু’জনকেই মনোনয়ন দেয়া হবে?তবে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় নিজেই তাদের প্রার্থী ঠিক করেছেন এখানে তৃণমূলের কোন নেতা কর্মীর কিছু বলার নেই।

ঋতবে তৃণমূলের তরফে বাবুল সুপ্রিয় ও শত্রঘ্ন প্রসাদ সিনাহার নাম প্রর্থী ঘোষণার পর থেকেই তাদের নিয়ে বালিগঞ্জে ও আসানসোলে জোর বিতর্ক দানা বাধে। বালিগঞ্জে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তরফে বাবুল সুপ্রিয় পরিবর্তন করে অন্য কাউকে প্রার্থী দেয়ার জন্য তৃণমূল নেত্রীর কাছে অনুরোধ জানায় তারা। তাদের বক্তব্য বিজেপিতে থাকা কালিন তিনি এনআরসি ইস্যুসহ বিভিন্ন সময় সংখ্যালঘু প্রসঙ্গে খাটো করে নানা মন্তব্য করতো। তাই বালিগঞ্জে তাকে প্রার্থী করায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একাংশ ক্ষুব্দ। তা ছাড়া বালিগঞ্জে অনেক অবাঙালিদের বসবাস রয়েছে। বাবুল সুপ্রিয়কে প্রার্থী হিসেবে তাদেরও পছন্দ নয়।

অপর দিকে শত্রুঘ্ন সিনহাকে এলাকার মানুষ পশেচিমবঙ্গে বহিরাগত ও অবাঙালি প্রার্থী হিসেবে চিহিৃত করে তাকেও প্রার্থীপদ পরিবতর্ন করে আসানসোলে স্থানীয় কাউকে প্রার্থী করার জন্য তৃণমূল নেত্রীর কাছে আর্জি জানায় তারা ।

গত বিধানসভা ভোট চলাকালিন বিজেপির রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার করতে আসে প্রধানমন্ত্রী নেরন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্য নাথসহ একাধিক কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। ওই সময় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ও তার দলের বিভিন্ন নেতা কর্মীরা তাদের নির্বাচনী বক্তৃতায় তাদেরকে অবাঙালি ও বহিরাগত বলে প্রচার করে বাঙালি সেন্টমেন্টকে একাট্রা করেছিলেন। তাই বিজেপিও এখন বিহার ও মুম্বাইর বাসিন্দা শত্রঘ্ন প্রসাদ সিনহাকে তৃণমূল থেকে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করায় সেই অবাঙলি ও বহিরাগত প্রশ্নটিকে হাতিয়ার করে জোর প্রচার চালতে শুরু করেছে বিজেপি। এখন আসানসোলের বাঙালিরা এই বিষয়টিকে কি ভাবে গ্রহণ করে তাই আগামীতে দেখার বিষয়

এদিকে আসানসোল ও বালিগঞ্জে তৃণমূলের দুই হেভিওয়েটের বিরুদ্ধে প্রার্থী বাছাইতে কার্যত হিমশিম খাচ্ছিল বিজেপি। অবশেষে শনিবার তাদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করল বিজেপি । আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন অগ্নিমিত্রা পল, আর বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে বাবুল সুপ্রিয়র বিপরিতে প্রতিদ্বন্দিতা করবেন  কেয়া ঘোষ । আসানসোল বিজেপির কাছে প্রেস্টিজ ফাইট। তাই খুব ভেবে-চিন্তেই তারা প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। রাজ্য রাজনীতিতে পরিচিত মুখ অগ্নিমিত্রা পল। আসানসোল দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক তিনি। আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনেও ফের অগ্নিমিত্রার প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল প্রবল। বাস্তবে বিজেপি তাকেই প্রার্থী করেছে।  বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে সামনে  অনেকেই ছিলেন। শেষপর্যন্ত  বিজেপির লড়াকু নেত্রী  কেয়া ঘোষের নাম ঘোষণা করলো।

বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী  পরে তৃণমূলে যোগ দেয়া তারকা প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়র  ছেড়ে আসা আসানসোলে বামেরা এবার প্রার্থী দিয়েছে সায়রা শাহ হালিমকে। বাম নেতা তথা বিশিষ্ট চিকিৎসক ফুয়াদ শাহ হালিমের স্ত্রী সায়রা। বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার প্রয়াত হাসিম আব্দুল হালিমের পুত্রবধূ ও অভিনেতা নাসিরউদ্দিন শাহের ভাইঝি তিনি। অন্যদিকে বালিগঞ্জে  কেন্দ্রে  উপনির্বাচনে বামেরা প্রার্থী করেছে শ্রমিক নেতা  পার্থ মুখোপাধ্যায়কে। উল্লেখ্য, রাজ্যে গত বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর খুব শ্লথ গতিতে হলেও ঘুরে দাঁড়ানোর একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বামেদের। সদ্য সমাপ্ত পুরভোটে নিজেদের ফলাফলে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছে বামেরা। তাই এবার প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাবধানী বাম নেতৃত্বও।