নিজস্ব প্রতিবেদক
ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২৪ জুলাই। পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে হবেন? সেই লক্ষ্যে ১৮ জুলাই ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করেছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার। তার আগেই এনডিএ তথা বিজেপি ও বিরোধী জোট তাদের মনোনীত রাষ্ট্রপতি প্রার্থী পদ বাছাই কাজ শুরু করে। অবশেষে বিজেপি ও বিরোধী জোট মঙ্গলবার অনুষ্ঠানিকভাবে তারা রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর নাম ঘোষনা করে দিয়েছে।
বিজেপি সংসদীয় বোর্ড রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসেবে আদিবাসী শিক্ষক দ্রৌপদী মুর্মুর নাম ঘোষণা করেছে। অপরদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন ১৮টি বিরোধী দল ঐক্যমতের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করেছে যশবন্ত সিনহাকে।
মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে দ্রৌপদি মুর্মর নাম ঘোষণা করে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা বলেন, ইতোপূর্বে দ্রৌপদী মূর্মকে ‘যে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তা সঠিকভাবে পালন করেছেন।তাই ওড়িশার প্রাক্তন এই বিজেপি নেত্রী উপরই ভরসা রাখল এনডিএ শিবির । ওড়িশার প্রাক্তন মন্ত্রীর পাশাপাশি ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল ছিলেন দ্রৌপদী মুর্মু । এর ফলে একদিকে আদিবাসী সমাজকে ভিন্ন বার্তা দিল বিজেপি। প্রথমে নাম উঠেছিলো বর্তমান উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডুর। শেষ মূহুর্তে সেই হিসাব বদলে গেল। ভোটের অঙ্কে এনডিএ এগিয়ে থাকায় এই প্রথম ভারতের রাষ্ট্রপতি হতে যাচ্ছেন একজন মহিলা আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি
তাঁর বিরুদ্ধে বিরোধী দলের প্রার্থী সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী যশবন্ত সিনহা। তৃণমূল কংগ্রেসের সহসভাপতি প্রবীণ রাজনীতিক যশোবন্ত সিনহা ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ১৮টি বিরোধী দলের সম্মিলিত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। গতকাল দিল্লিতে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলগুলোর বৈঠকে তাঁকে সর্বসম্মতিক্রমে মনোনীত করা হয়। তার আগে যশোবন্ত সিং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সহসভাপতি থেকে ইস্তফা দেন। রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২৯ জুন। ভোট গ্রহণ ১৮ জুলাই।
যশোবন্ত সিনহা ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র ও অর্থমন্ত্রী। অটলবিহারি বাজপেয়ির মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন তিনি। দুই বছর আগে তিনি ভারতীয় জনতা পর্টি (বিজেপি) থেকে বেরিয়ে গিয়ে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন।
বর্তমান চতুর্দশ রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে ২৫ জুলাই। সাধারণত ভারতে কোনো রাষ্ট্রপতি দ্বিতীয়বার মনোনীত হননি। রাষ্ট্রপতি পদের ভোটাররা হলেন সংসদের লোকসভা ও রাজ্যসভার ৭৭৬ জন সদস্য। এবং ২৮টি রাজ্য ও পাঁচটি কেন্দ্র শাসিত এলাকার ৪১২০ জন বিধায়ক হতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে প্রার্থীকে মোট ভোটের ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ পেতেই হবে।
বর্তমানে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএর ভোট সামান্য কম রয়েছে। তবে তাঁদের আশা তাঁদের প্রার্থীই জিতবেন। বিরোধী দলের বৈঠকের পর কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বিরোধীদের যৌথ বিবৃতি পড়ে শোনান। তিনি বলেন, মোদি সরকার বর্তমানে দেশের যা ক্ষতি করছে তা রুখতে হলে প্রগতিশীল যশোবন্ত সিনহাকে জেতাতেই হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন বিজেপি তাঁদের প্রার্থীকে মেনে নেবেন।
এর আগে শারদ পাওয়ার কাশ্মীরের ফারুক আবদুল্লাহ ও সাবেক রাজ্যপাল গোপাল গান্ধী প্রার্থী হতে রাজি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত সবাই যশোবন্ত সিনহাকে মেনে নেন।
ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫৫ (৩) ধারা অনুসারে, একক ভোটদানের মাধ্যমে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব মেনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।