বেনাপোল- পেট্টাপোল সিমান্তে আটকা পড়েছে হাজারো ভারতগামী বাংলাদেশী যাত্রী, হয়রানীর অভিযোগ।
এম এ রহিম, বেনাপোল প্রতিনিধি
বেনাপোল সিমান্ত : ভারতীয় পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের একটি অঘোষিত নির্দেশনার ফলে শুক্রবার বেনাপোল পেট্টাপোল সীমান্তে আটকা পড়েছেন হাজারো ভারতগামী বাংলাদেশী যাত্রী। সিমাহীন হয়রাণির অভিযোগ করেছেন ওই সব যাত্রীরা।
যাত্রীদের অভিযোগ, শুক্রবার ( ১ জুলাই ) সকাল থেকে বেনাপোল পেট্টাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন দিয়ে ট্যুরিস্ট মাল্টিপল ভিসায় যাত্রীদের ভারত গমণে অনুমতি দেওয়া হচ্ছেনা। জানাগেছে,পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ কোন পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই এক বছর বা তার অধিক ট্যুরিস্ট মালটিপল এন্ট্রি ভিসায় যারা ইতোপূর্বে ভারত ভ্রমণ করার পর যাদের তিন মাসের কম দিবস রয়েছে তারা তিনমাস পর ফের ভারত ভ্রমণ করতে পারবেন, অর্থাৎ তিন মাসের মধ্যে মাল্টিপল ভিসায় কোন যাত্রী ভ্রমণ করতে পারবেনা ভারতে এমনটাই বলা হয়েছে পেট্রাপোলের নির্দেশনায় ।
ভারত সরকারের বরাত দিয়ে এমনই এক অঘোষিত ফরমান জারী করে পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন থেকে এদিন বহু ভারত গমণেচ্ছুক যাত্রীদের (এদের অনেকেরই বাংলাদেশের বেনাপোল ইমিগ্রেশনের সমস্ত কাজ শেষে ডিপার্চার স্ট্যাম্প দেয়ার পর পেট্রপোল ইমেগ্রেশনে গেলে) তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা যাত্রীরা মাল্টিপল ভিসায় ভারতে যেতে না পেরে বহুযাত্রী বিপাকে পড়ছে। এ ব্যাপারে পূর্বঘোষণা ছাড়া্ই কেন যাত্রীদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে, এমন প্রশ্ন করা হলে পেট্রাপোলের মত আন্তর্জাতিক সিমান্ত বন্দরের ইমিগ্রেশনে দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সাফ জানিয়ে দেন প্রতি ভ্রমণের ৩ মাস পরপর ট্যুরিস্ট ভিসায় ভারতে প্রবেশ করতে পারবেন, অন্যথায় নয়। এর ফলে এদিন সকাল থেকে হাজারো যাত্রী ফিরে আসতে বাধ্য হন। ভারতীয় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের এমন আচরণে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভুক্তভোগী যাত্রীরা। তারা বলেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে বেশীরভাগ লোক ভ্রমণ করতে যায় আর্থিক সংকুলানের জন্য, কিন্তু ভারত সরকারের মাঝে মাঝে অদ্ভুত নিদের্শনার কারণে আমাদের যে কি পরিমাণ ভোগান্তি পোহাতে হয় তা যারা ভ্রমণ করেন তারা ছাড়া অন্য কেউ বুঝবেননা। এই সব কারণে বর্ডারে কি পরিমাণ সময় ও অর্থের ক্ষতি হয় তা ভারত সরকার বা তাদের ইমিগ্রেশন কতৃর্পক্ষ কি করে বুঝবে? ভারত বিভিন্ন সময় হঠাৎ করেই অহেতুক নিয়ম জারী করে সমস্যার সৃষ্টি করে। এতে করে বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের প্রতি ওই সমস্ত যাত্রীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে বৈরীতা সৃষ্টি হয়। তাই এ ব্যাপারে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বাংলাদেশী ভুক্তভোগী পাসপোর্ট যাত্রীরা।
ভারতে গমনেচ্ছুক যাত্রী রতন কুমার ও আরমান হোসেন ও কাকলি বালা যথাক্রমে এই প্রতিনিধিকে বলেছেন, অনেক কষ্ট করে ঢাকা ও মাগুরা থেকে শুক্রবার সকালে তারা বর্ডারে এসেছেন। এসে জানতে পান ভারতের ওই নিয়মের কথা। কিন্তু তার আগেই বাংলাদেশ বর্ডারে প্রতি পাসপোর্টে ভ্রমণ কর হিসেবে ৫৫০ টাকা সোনালী ব্যাংকে পরিশোধ করতে হয়েছে তাদের। কিন্তু ইমিগ্রেসন থেকে ফিরে আসা যাত্রীদের ৫০০ টাকা টাকা ফিরিয়ে দেয়। বাকি ৫০ টাকা তাদের আর ফিরিয়ে দেয়না সংশ্লিষ্ট ব্যাংক।
বেনাপোল-র ইমিগ্রেশন ওসি রাজু আহম্মেদ এই সংবাদদাতাকে বলেন, ভারত ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ হঠাৎ ভ্রমণ ভিসায় তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশী কোন যাত্রীকে গ্রহণ না করার ফলে বেনাপোল ইমিগ্রেশন ওই যাত্রীদের ভারতে যেতে অনুমতি দিতে পারেনা। আমরা অনুমতি দিলে যাত্রীরা আরও অসুবিধায় পড়বেন, তাই আমরা আমাদেরনাগরিকদের তো বিপদে ফেলতে পারিনা। তবে বিজনেস ও মেডিক্যালসহ অন্য সব ভিসায় যাত্রীগমণা-গমণে কোন বাধা নেই, এমনটাই জানায় ওসি রাজু আহম্মেদ।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দাবী কোন ব্যাক্তি ভ্রমণ ভিসায় ভারতে এসে ভ্রমণের নামে চিকিৎসাও করিয়ে থাকেন। নিয়ম অনুযায়ী এসব যাত্রীরা বিজনেস ও মেডিক্যাল ভিসায় ভারতে গেলে আর কোন বাধা থাকেনা। তিন মাসের মধ্যে ভ্রমণের বিষয়টি ভিন্নভাবে দেখছেন তারা। তবে এসব বিষয়ে সরকারি কোন লিখিত নির্দেশ আছে কিনা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কমর্কর্তা কিছুই জানাতে পারেননি। এই বিষয়টি নিয়ে দুদেশের কুটনৈতিক স্তরে আলোচনা করা উচিৎ বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন।