নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের প্রশান্ত কুমার হালদার সহ ৬ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বেআইনি অর্থ পাচার মামলার চার্জশিট পেশ করেছে ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি।
কলকাতার ব্যাঙ্কশাল কোর্টের বিশেষ সিবিআই-১ আদালতে ইডির তরফে মঙ্গলবার আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী ওই চার্জশিট দাখিল করেন। মামলা শুরুর পর ৫৯ দিনের মাথায় আদালতে চার্জ গঠন করা হল।পিকে হালদারসহ ছয় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কলকাতার সিবিআই আদালতে চার্জশিট পেশআদালতে এই চার্জশীট পেশ করার মধ্যদিয়ে পিকে হালদারসহ ছয় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আদালতে বিচার কার্যক্রম শুরু হলো। আগামী ১৫ জুলাই ফের পিকে হালদারসহ ওই ছয় অভিযুক্তকে আদালতে তোলা হবে।
ইডির আইনজীবী আরিজিৎ চক্রবর্তী ইউএনবি-কে বলেন, পিকে হালদারসহ অন্যান্যদের নামে ভারতে এ পর্যন্ত ৪১টা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, নগদ ৩শ কোটি রুপী, বাড়ি ও জমি মিলিয়ে ১৮টি অস্থাবর সম্পত্তির উল্লেখ রয়েছে অভিযোগপত্রে। বাজার মূল্যে এই অস্থাবর সম্পত্তির পরিমান আনুমানিক পাঁচ কোটি রুপি। এই বিষয়গুলোও চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী জানান, প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট-২০০২ (পিএমএলএ) মামলায় পিকে হালদারসহ ছয় অভিযুক্ত ব্যক্তির নামে ওই আইনের তিন নম্বর ধারায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ছয় অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়াও তাদের দুটি সংস্থার নামেরও উল্লেখ রয়েছে এই অভিযোগপত্রে।
পিকে হালদারসহ ছয় অভিযুক্তর আইনজীবী শেখ আলী হায়দার বলেন, হঠাৎ এই চার্জ গঠনের ফলে তার মক্কেলদের জামিন পেতে অনেক বেশি সময় লাগতে পারে। তবে তার দাবি, চার্জশীটের কপি এখনও আমার হাতে আসেনি। এলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো।
শুধু বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার করে ভারতে আনাই নয়, পিকে হালদার ও তার সহযোগীরা ভারতে বেআইনি প্রবেশ করে, ভারতের পাসপোর্ট, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড জাল করার মতো অপরাধে করেছেন।
তবে আইনজীবীদের একাংশ মনে করছেন, দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শেষ করে, পিকে হালদারসহ সকল অভিযুক্তকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয়া হতে পারে।
বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ও দুর্নীতি দমন কমিশনের তরফে গত ৬ মে ভারত সরকারকে পিকে হালদারের টাকা আত্মসাৎ এবং ভারতের লুকিয়ে থাকার বিষয়টি জানানো হয়। এরপর ১০ মে থেকে পিকে হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে শুরু হয় ইডির তল্লাশি অভিযান।
গত ১৪ মে অশোকনগর সহ পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু জায়গায় অভিযান চালিয়ে পিকে হালদার ওরফে প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে শিব শঙ্কর হালদারকে গ্রেফতার করা হয়।
পিকের সাথেই গ্রেফতার করা হয় তার ভাই প্রাণেশ হালদার, স্বপন মিস্ত্রি ওরফে স্বপন মৈত্র, উত্তম মিস্ত্রি ওরফে উত্তম মৈত্র, ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদার এবং আমানা সুলতানা ওরফে শর্মী হালদারকে।
ইতোমধ্যেই পিকে হালদারসহ গ্রেফতারকৃত ছয়জনের বিরুদ্ধেই প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট-২০০২ এর ৩ ও ৪ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আদালতের তরফে কয়েক দফায় ইডি রিমান্ড এবং জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়ার পর পিকে হালদার সহ ৫ পুরুষ অভিযুক্ত রয়েছেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কারাগারে। আর আমানা সুলতানা ওরফে শর্মী হালদার রয়েছেন আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের নারী সেলে।
অর্থ পাচার সংক্রান্ত মামলায় পিকে হালদারের অন্যতম সহযোগী স্বপন মৈত্রের স্ত্রী পূর্ণিমা মৈত্রকে-ও জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন ইডির কর্মকর্তারা। এই মামলায় বাংলাদেশের দুদকের এজহারভুক্ত আসামি পূর্ণিমার কী ভূমিকা রয়েছে- তা খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী কর্মকর্তারা। সেক্ষেত্রে তার গতিবিধির উপর নজর রাখা হচ্ছে।
পিকে হালদারের আরেক সহযোগী সুকুমার মৃধার বড় মেয়ে অতসী মৃধা এবং তার স্বামী সঞ্জীব হাওলাদারকেও পৃথক ভাবে জেরা করেছে ইডির তদন্তকারী কর্মকর্তারা। জেরা করে তাদের কাছ থেকে যে সব তথ্য ইডি পেয়েছে মঙ্গলবারে জমা দেয়া ১০০ পৃষ্ঠার চার্জশীটে তারও উল্লেখ রয়েছে।