ঢাকা থেকে হরলাল রায় সাগর
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির গ্রামের বাড়িতে অতিথি হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) কিশোরগঞ্জ মিঠামইনে বীর মুক্তিযদ্ধা আব্দুল হামিদের সেনানিবাসে যান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
এক সরকারী আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাষ্ট্রপতি মো আব্দুল হামিদের আমন্ত্রণে হাওড়-বাওড় ঘেরা কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাড়িতে শেখ হাসিনা আজ মঙ্গলবার অতিথি হয়ে গিয়েছিলেন। এদিন ১টায় তাঁর পৈত্রিক নিবাসে পৌছান বঙ্গবন্ধু কণ্যা শেখ হাসিনা।
হাওড়-বাওড়ের ১৮ প্রজাতির মাছ দিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আপ্যায়িত করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ১৯৯৮ সালের ৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবার মিঠামইন সফর করেন। তখন আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার ছিলেন। দীর্ঘ ২৫ বছর পর প্রধানমন্ত্রী মিঠামইন সফর করলেন। আসছে এপ্রিলের ২৩ তারিখ রাষ্ট্রপতি হিসেবে দ্বিতীয় দফায় মেয়াদ শেষ হচ্ছে আবদুল হামিদের। তাঁর স্থলাভিসিক্ত হচ্ছেন দুর্ণীতি দমন কমিশনের সাবেক কমিশনার ও সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মো. সাহাবুদ্দিন। মধ্যাহ্ন ভোজে রাতাবোরো চালের সাদা ভাতের সঙ্গে ছিল রুই, কাতল, চিতল, আইড়, পাবদা, গুলশা-টেংরা ও কালিবাউশ মাছের দোপেয়াঁজো এবং শোল, বাইন, চিংড়ি, বোয়াল, গ্রাস কার্প, বাচা মাছের ভুনা এবং রিটা মাছ ও পাঙ্গাশ মাছ মাখা মাখা ঝোল। সঙ্গে মসুর ডাল, সালাদ ও মিষ্টিতে রসমালাই। ছিল গরু-মহিষের দুধ দিয়ে তৈরি ঐতিহ্যবাহী অষ্টগ্রামের পনির। এই পনিরের ঐতিহ্য দিল্লির মুঘল সম্রাটের দরবার পর্যন্ত ছিল।
দিনব্যাপী সফরের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা ১১টা ২২ মিনিটে কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল হামিদ সেনানিবাসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ঘোড়াউত্রা নদীর তীরে ২৭৫ একর জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে সেনানিবাসটি। এরপর রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে তাঁর পৈতৃক নিবাস কামালপুরের বাড়িতে শেখ হাসিনা। দুপুর পৌনে ১টার দিকে সেখানে পৌঁছান তিনি। এসময় রাষ্ট্রপতি ও তার সহধর্মিণীসহ অন্যান্যরা প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।
এদিন বিকালে মিঠামইন সদরে হেলিপ্যাড মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি বলেন, বিএনপি যখনই ক্ষমতায় এসেছে, দেশের সম্পদ লুট করেছে। সেই সম্পদ বিদেশে পাচার করে এখন আরাম-আয়েশে দিন কাটাচ্ছে। আর দেশের মানুষ যখন কষ্ট পায়, তখন তারা আরও কষ্ট দেয়। আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে। যারা বোমা মেরে, আগুন দিয়ে মানুষকে হত্যা করতে পারে তারা কখনো মানুষের কল্যাণ করতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত বা ২০ দলীয় জোট যখনই ক্ষমতায় এসেছে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। আওয়ামী লীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন উল্লেখ করে তিনি বলেণ, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে দেশের মানুষের কল্যাণ হয়, ফসল উৎপাদন বাড়ে, মাছ উৎপাদন বাড়ে, তরিতরকারি-ফলফুল উৎপাদন বাড়ে, মানুষ খেয়ে-পরে সুখে থাকে।দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আরও একবার নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে হাওরের মানুষের ওয়াদাও নেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। হাওরবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেছেন, আগামীতে যে নির্বাচন হবে এই বছরের শেষে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে, সেখানেও আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন। আপনারা দুই হাত তুলে ওয়াদা করেন নৌকায় ভোট দেবেন। এসময় উপস্থিত জনতা প্রধানমন্ত্রীর আহবানে হাত নেড়ে সাড়া দেন।
সেনানিবাসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবাধ পানি প্রবাহ ও নিরাপদ মৎস্য উৎপাদনের জন্য হাওর অঞ্চলের প্রতিটি সড়ক এলিভেটেড করা হবে। আমি ইতোমধ্যেই জমি ভরাট না করে হাওর, বিল ও জলাভূমি এলাকার প্রতিটি রাস্তা এলিভেটেড করার নির্দেশনা দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে মিঠামইনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ সেনানিবাসে পৌঁছান। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে স্থানীয়ভাবে নির্মাণ করা হয়েছে তোরণ। জনসভার জন্য তৈরি করা হয় বিশাল আকারের নৌকার আদলের মঞ্চ।
রাষ্ট্রপতির বড় ছেলে ও স্থানীয় সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, ‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর আমলে হাওরের এত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। এক সময় হাওরে মানুষ আসতে চাইত না, আর এখন দেখতে আসে। প্রধানমন্ত্রীর অবদানের কারণেই এই উন্নয়ন হয়েছে।’
মিঠামইন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার বৈষ্ণব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একসময়ের পশ্চাৎপদ হাওরে ব্যাপক উন্নয়নের কারণে খেটে-খাওয়া মানুষের জীবন-মান পরিবর্তন হয়েছে। এজন্য মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ।
ভি-এইচ-৪’