প্রণব ভট্রাচার্য্য,
কলকাতা, ২৪ মে, ২০২৩ : ভারত বাংলাদেশের সম্পর্কের স্থায়ী ভিত্তি হবে সাংস্কৃতিক বন্ধন”এই চিন্তায় বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-র একান্ত পরিকল্পনা চিন্তা চেতনা ও নির্দেশনায় ১৯৭২ সালের ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রথম সাংস্কৃতিক বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে দুই দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি, শিল্পকলা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সম্প্রীতি বজায় রেখে কাজ করবে। স্বাধীনতার পর থেকে বিগত ৫০ বছর ধরে দুদেশের সরকার পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নে এই কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। বাংলাদেশ ও ভারত সরকার দূতাবাসের মাধ্যমে দুইদেশের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান, শিক্ষা সফর সহ নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার বাহিরেও সাংস্কৃতিক দলগুলো দুদেশের এ সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আজ (২৪ মে) পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার আইসিসিআর সত্যজিত রায় মঞ্চ (অডিটোরিয়ামে) বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি জগতের বিশিষ্টজনদের ৫ম পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই কথা বলেছেন।অনুষ্ঠানের শুভারম্ভ করেন বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য তথা পটুয়াখালী ৪ াসন-র সংসদ সদস্য মো.মহিব্বুর রহমান, কলকাতার মেয়র ইন কাউন্সিল দেবাশীষ কুমার, কলকাতা উপদূতাবাসের ভিসা প্রধান আলমাস হোসেন, বাংলাদেশ উপদূতাবাসের প্রেস সচিব রঞ্জন সেন, বিএফটিসিসি’র-র সভাপতি এস খেমকাসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহিব্বুর রহমান এমপি বলেন, দুই দেশের সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল অভিন্ন, সেই অভিন্ন সংস্কৃতি ধারায় দুই দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আমরাও চাই দুই বাংলার মানুষদের নিয়ে আরও বেশী করে এ ধরনের পুরুস্কার আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হোক। এতে করে দুই দেশের মানুষে-মানুষে যোগাযোগ এবং সম্পর্কের প্রভূত উন্নয়ন ঘটবে। বাড়বে হৃদ্যতা আরও বাড়বেএমপি মহিব্বুর বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের ভূমিকা ছিল প্রভূত। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারত ছিল বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধকালিন ভারত আমাদের এককোটি মানুষকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়েছিল। সে সময় ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে বন্ধুপ্রতিম ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হয়েছিল তা চিরকাল অক্ষুন্ন থাকবেএই মহতি অনুষ্ঠানে এমপি মহিব্বুর রহমান এমপি বিনম্র চিত্তে স্মরণ করেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানক, মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদকে, শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন মুক্তিযুদ্ধে ভারতের যে সব বীর সেনারা অংশ নিয়ে শহীদ হয়েছেন তাদেরকে, স্মরন করি ১৫ আগষ্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটে নিহত বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সহ বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদেরকে, জাতীয় চার নেতাকে, মুক্তিযুদ্ধে সম্ভ্রম হানী দুই লক্ষ মা বোনকে।‘বেঙ্গল ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন চেম্বার অফ কমার্স’এর ৫ তম এওযার্ডে মনোনিত হয়ে নায়করাজ রাজ্জাক নামাঙ্কিত যৌথভাবে আজীবন সম্মাননা পেলেন বাংলাদেশের চিত্র অভিনেতা ওমর সানী এবং অভিনেত্রী আরিফা পারভীন জামান মৌসুমী।তবে সম্মাননা নিতে কলকাতায় যেতে পারেননি ঢাকাই সিনেমার এ দুই তারকা। তাই ওমর সানীর হয়ে সম্মাননা গ্রহণ করেন কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের ভিসা প্রধান আলমাস হোসেন এবং মৌসুমীর হয়ে পুরুস্কার গ্রহণ করেন সুরকার বিক্রম ঘোষের স্ত্রী অভিনেত্রী জয়া শীল ঘোষ।এবারে বেঙ্গল ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন চেম্বার অফ কমার্স (বিএফটিসিসি) ৮ম বর্ষে পা রাখল।
এদিন বিশিষ্ট অভিনেত্রী লিলি চক্রবর্তী পেয়েছেন হীরালাল সেন জীবনকৃতি সম্মাননা। এছাড়া দেবকী বোস লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট সম্মান পেয়েছেন পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী।
পুরুস্কার পেয়ে অভিনেত্রী লিলি চক্রবর্তী বলেন, সম্মান সবার ভালো লাগে। তবে লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড মানে জীবনের শেষ সম্মান। তার মানে আমার দিন শেষ। তা নয়, আমি এখনও অভিনয় করছি। আমার অভিনয়ের মধ্যদিয়ে আপনাদের আরও আনন্দ দিয়ে যেতে চাই।
হরনাথ চক্রবর্তী বলেন, আমার পরিচালনা আপনাদের ভালো লাগে এটাই আমার বড় প্রাপ্তি। আমি আরও আনেক ভালো কিছু দিয়ে যেতে যাই আপনাদের।প্রসঙ্গত, হীরালাল সেনের আদি বাড়ি ছিল বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ জেলায়। তিনিই ছিলেন ভারতের প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একজন। চল্লিশটিরও বেশি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন। তাকে ভারতের সর্বপ্রথম বিজ্ঞাপন বিষয়ক চলচ্চিত্রের নির্মাতা বলেও গণ্য করা হয়। ভারতের প্রথম রাজনীতি ভিত্তিক ছবি তিনিই বানিয়েছিলেন।
অপরদিকে, দেবকী বোস পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার বাসিন্দা। তিনিই ভারতীয় সিনেমায় শব্দ এবং সংগীতের উদ্ভাবনী ব্যবহারের জন্য সুপরিচিত। তার সময়ে সেরা ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার পরিচালনায় বহু বাংলা সিনেমা পাশাপাশি হিন্দি মারাঠি এবং তামিল ভাষায় মুক্তি পেয়েছিল।এছাড়াও ভারতের চিত্র সাংবাদিক ও গবেষক স্বপন মল্লিককেও এওয়ার্ড দিয়ে সন্মানিত করা হয়।