এম এ রহিম, বেনাপোল থেকে
এখন স্থল-রেল-ও বিমানে ভারত ভ্রমণ করেতে গেলে প্রত্যেক ভ্রমণকারীকে শুল্ক গুনতে হবে আগের চেয়ে দ্বিগুণ হারে। আগে ভ্রমণ কর ছিল ৫০০ টাকা, তার উপরে ৫১.৯৩ টাকা টামির্নাল ট্যাক্স স্থল পথের জন্য। সব মিলিয়ে স্থলপথে ৫৫২ টাকা জমাদিতে হবে ব্যাংকে। সেই কর বেড়ে এখন হয়েছে স্থল ও রেলের জন্য ১০০০+৫২ টাকা টার্মিনাল ট্যাক্স। বিমানের জন্য ২০০০ টাকা। ‘এ যেন মরার উপর খারার ঘা।’ ভ্রমণ করের এমন তোঘলোকি বৃদ্ধির বর্ধিত চাপে দিশেহারা ভ্রমণকারীরা, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবর্তী শ্রেণীর ভ্রমণকারীরা সবচেয়ে বেশী চিন্তায় পড়েছে।
দেশ স্বাধীনের পরথেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সৌহার্দ্য সম্প্রীতি ও বন্ধুর্ত্বপূর্ণ সম্পর্কের সুবাদে দেশের বিভিন্ন শুল্ক-স্টেশন দিয়ে বেড়েছে আমদানি রফতানি ও বৈধভাবে (পাসপোর্ট যাত্রী)-র যাতায়াত।।
সেই সূত্রে চিকিৎসা-ব্যাবসা-কৃষি-চাকুরী-শিক্ষা ও আত্মীয়-পরিজনদের সাথে দেখা করাসহ বিভিন্ন কাজে স্থল, আকাশ ও রেলপথে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যাডায়াত করেন দু দেশের নাগরিকেরা। দু’দেশের কৃষ্টি কালচার ও সাংস্কৃতিক সহ নানারকম মন-প্রশান্তি নিয়ে প্রতিবেশী দুইদেশের নাগরিক ভ্রমণ করে থাকেন চিরাচরিতভাবে। কিন্তু হঠাৎ করে বাংলাদেশ সরকার সরাসরি ১০০% ভ্রমণ কর বৃদ্ধি করায় ভারত ভ্রমণ নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন তারা।
১লা জুলাই থেকে দেশটির সরকার স্থলপথে ভ্রমনকর ৫০০টাকা থেকে বাড়িয়ে দ্বিগুণ অর্থাৎ ১০০০ টাকা করা হয়েছে। অপরদিকে রেলের ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে মাত্রাতিরিক্ত, ৫শ থেকে ৬শ টাকা। এই বৃদ্ধির ফলে ইতোমধ্যেই স্থলপথে ভারত ভ্রমণের হার কমতে শুরু করেছে। তেমনি কর বৃদ্ধির পর গত ২৩ দিনে রাজস্ব আয়ও অনেক কম হয়েছে বলে বন্দর ও কাস্টমস সূত্রে জানানো হয়। বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন সুত্র জানায়. গত এক বছরে বেনাপোল পেট্টাপোল ইমিগ্রেশন দিয়ে ১২ লাখ ৩৭ হাজার ৮শ ১জজন যাত্রী যাতায়াত করেছে। এরমধ্যে ভারতে গেছে ৬ লাখ ২৯ হাজার ৩শ ২৫ জন। অপরদিকে বাংলাদেশে এসেছে ৬ লাখ ৮ হাজার ৪শ ৭৬ জন। ১৬৭৮ জন অন্য দেশের (ফরেনার) যাতায়াত করেছে। সব মিলিয়ে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ৬ কোটি টাকার ও বেশীবেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্থলপথে চলাচলকারী পাসপোর্টধারী যাত্রীদের কাছ থেকে ভ্রমণকর বাবদ নেওয়া হত ৫০০ টাকা। ১জুলাই থেকে ভ্রমননকর ১০০০টাকা কার্য্যকর হয়ছে ৷ অন লাইনে ও বেনাপোল স্থলবন্দরের প্যাসেঞ্জার টার্মিনালে অবস্থিত সোনালী ব্যাংকের বুথে বর্ধিত হারে এই টাকা নেওয়া শুরু হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৬ থেকে ৮হাজার নারী-পুরুষ- শিশু বৃদ্ধ নাগরিক বাংলাদেশ ও ভারতে যাতায়াত করে থাকেন। ঢাকা-কলকাতা, ঢাকা-শিলিগুরি, খুলনা-কলকাতা যতায়াতকারী মৈত্রী এক্সপ্রেস, বন্ধন এক্সপ্রেস এবং মিতালী এক্সপ্রেসেও স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করেন দুদেশের নাগরিকেরা। বাংলাদেশের যাত্রীরা বেশির ভাগই ভারতে যান চিকিৎসা করাতে।
বেনাপোল স্থলবন্দর পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল জলিল বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে, ভ্রমণকর ১,০০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই হিসাবে ১ জুলাই-২০২৩ থেকে নতুন এই নিয়ম এবং শুল্ক হার কার্যকর করা হয়েছে। কর বাড়ানোর কারণে সমস্যায় পড়েছেন অনেকেই। ৫০০ টাকার পরিবর্তে রাতা রাতি ১০০০ টাকা হওয়ায় ভ্রমণ কর পরিশোধ করতে গিয়ে ভ্রমণকারিদের সাথে বাক-বিতান্ডার সৃষ্টি হচ্ছে। ভ্রমণকারীরা বুঝতে পারছেনা কেন তাদেরকে েকসঙগে বাড়ানো ৫০০ টাকা দিতে হবে? তারা বলেন, এই যে ১০০% ভ্রমণ কর বাড়িয়েছেন তাতে জনগণের কোন মতামত নেয়া হয়নি কেন? স্বাধীনতার পরে কোন সরকারই এই ভাবে ভ্রমণ কর ‘ডবলস্ট্যান্ডার্ড’-এ বৃদ্ধি করেনি। এখন অবস্থাদৃষ্টে তাই চাপিয়ে দেয়া হলো। এ ব্যাপারে তারা সরকারের কাছে প্রশ্ন তুলেছেন কি যুক্তিতে সরকার তথা রাজস্ব বিভাগ ভ্রমণ কর ৫০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা বাড়ালো? যা দুর্ভাগ্যজনক ও বেদনাদায়ক ভ্রমণকারীদের জন্য। তাই সরকারের কাছে এই বর্ধিতকর বাতিলের দাবি জানিয়েছেন ভ্রমণকারী-রা। সংশ্লিষ্ট কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানায, দেশের সব স্থলবন্দর গুলো দিয়ে কর বৃদ্ধি করা হয়েছে। ১২ বছর বয়সী পর্যন্ত যাত্রীদের ভ্রমণকর অর্ধেক করা হয়েছে। এছাড়া পাঁচ বছরের কম বয়সী, অন্ধ ব্যক্তি, ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী বা স্ট্রেচার ব্যবহারকারী বা শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য ভ্রমণকর ছাড় দেয়া হয়েছে। কাস্মস কর্তৃপক্ষ জানায়, করবৃদ্ধিতে ল্যাগেজ ব্যাবসায়িদের যাতায়াত কমবে। জুলাই থেকে রেল ভাড়া বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ডলারের দাম ও ট্রাভেল ট্যাক্স বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ও ভারত চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মতিয়ার রহমান ও বেনাপোল আমদানি রফতানি কারক সমিতির সভাপতি মহাসিন মিলন বলেন বন্দর দিয়ে ভারতগামী বাংলাদেশী য়াত্রীদের যেমন ১০০০টাকা ভ্রমণ কর ও ৫৫ টাকা পোর্ট ট্যাক্সদিতে হচ্ছে তেমনি ভারতীয় যাত্রীদের কাছ থেকে বাংলাদেশ থেকে ফেরৎ কালে একই হারে অর্থাৎ ১০০০ টাকা ভ্রমণকর ও ৫৫ টাকা টার্মিনাস ট্যাক্স আদায় করা হয়। তাঁর আশঙ্কা এই শুল্ক বৃদ্ধি আরোপের ফলে ভারতীয় ভ্রমণকারীর সংখ্যা অনেকটাই কমবে ফলত: রাজস্ব আয়ও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। পাশাপাশি দেশের পর্যটন খাতও পড়বে হুমকির মুখে।
এসব বিষয়ে বেনাপোল ইমিগ্রেশন ওসি আহসান হাবিব জানান, ভ্রমণকর বৃদ্ধি হলেও যাত্রী কমেনি। তেমন প্রভাব এখনও পরেনি। আগের মতোই প্রতিদিন ৬থেকে৮হাজার যাতায়াত করছে বলে জানান তিনি।
অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ রেলওয়ের উপপরিচালক (ইন্টারচেঞ্জ) মোহাম্মদ মিহরাবুর রশিদ খাঁন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঢাকা-কলকাতা-য় চলাচল করা মৈত্রী এক্সপ্রেসের এসি সিটের ভাড়া ৪ হাজার ১৯৫ টাকা থেকে ৬০০ টাকা বাড়িয়ে ৪ হাজার ৭৯৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এসি চেয়ারের ভাড়া ২ হাজার ৯৬৫ টাকা থেকে ৫৬৫ টাকা বাড়িয়ে ৩ হাজার ৫৩০ টাকা করা হয়েছে। ঢাকা থেকে নিউ জলপাইগুড়ি রুটের মিতালী এক্সপ্রেসের এসি বার্থের ভাড়া, ভ্যাট ও ট্রাভেল ট্যাক্সসহ ৬ হাজার ৫৭০ টাকা, এসি সিটের ভাড়া, ভ্যাট ও ট্রাভেল ট্যাক্সসহ মোট ৪ হাজার ১৭৫ টাকা এবং এসি চেয়ারের ভাড়া, ভ্যাট ও ট্রাভেল ট্যাক্সসহ ২ হাজার ২৬৫ টাকা। খুলনা-কলকাতা পথে এসি সিটের ভাড়া ৫৫০ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৯০০ টাকা। আর এসি চেয়ারের ৫৩০ টাকা বাড়িয়ে ২ হাজার ২৬৫ টাকা করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শূন্য থেকে ৫ বছর পর্যন্ত শিশুর ভাড়া বড়দের ভাড়ার ৫০ শতাংশ ধরা হবে।
যাত্রী সহিদুল ইসলাম মোমেনা বেগম ও আরিফ মন্ডল জানান.দ্বিগুনণভ্রমনকর ও পোর্ট ট্যাক্স দিয়েও পাননা কাঙ্খিত সেবা। প্যাসেজ্ঞার টার্মিনালের সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত হন তারা। রয়েছে হয়রানিসহ বিস্তর অনিয়মের অভিযোগ ।তাদের প্রশ্ন ভ্রমণ কর বর্ধিত হারে নিলেও বন্দরে প্যাসেঞ্জারদের জন্য কোন বাড়তি সুবিধা দেয়া হয়না তার্মিনালের বাইরে ঘন্টার পর দুর্বিষহ কষ্টকর হয়ে ঘন্টা দাড়িয়ে থাকতে হয় বাইরে। এমনকি সেখানে সিনিয়র সিটিজেন, মহিলা ও শিশুদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ বন্দর প্রশাসন এগুলোকে কোন ম্যাটার-ই মনে করেনা। অথচ এই ভ্রমণকারীদের ট্যাক্সের টাকায় তারা বেতনভুক করর্মকর্তা-কর্মচারী। এ ব্যাপারে সরকারকে ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বরত সংস্থাগুলোকে অবিলম্বে কাযকর পদক্ষেপ নেয়ার জনা জোর দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগি জনগণ।