বাংলাদেশ থেকে নিজস্ব প্রতিনিধি
ঢাকা (বাংলাদেশ) ২ জানুয়ারী ২০২৪ : আগমী ৭ জানুয়ারী বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বাকি মাত্র চারদিন। চারদিন পর সকাল থেকেই ভোটগ্রহণ শুরু হবে। কিন্তু তার আগে আওয়ামী লীগকে হারাতে যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধুর খুনীর পরিবারগুলো ভয়ঙ্কর ছক কষছে বলে বিভিন্নসূত্রে জানা যায়।
জানুয়ারীনির্বাচনে বিএনপি ও তার প্রধান শরিক দল জামায়েতে ইসলামী বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করছে না। কিন্তু আওয়ামী লীগ তথা নৌকাকে হারাতে অভিনব পন্থা গ্রহণ করেছে এই দুটি দল। নিজেরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীর ব্যানারে তারা অনেক এলাকায় গোপনে আবার অনেক এলাকায় প্রকাশ্যে প্রচারণায় অংশগ্রহণ করছেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নমনীয় মনোভাবের কারণে এবছর স্বতন্ত্রপ্রার্থীর সংখ্যা অনেক।কারণ হিসেবে দেখা গেছে এবার আওয়ামী লীগের প্রতিটি সংসদ এলাকায় মনোনয়ন প্রত্যাশি ছিল একাধিক, কোন কোন এলাকায় তার ও বেশী। মনোনয়ন বাছাইপর্বে এদের মধে্য অনেক বাদ পড়েছে। তাদের সামল দিতে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারনী সিদ্বান্তে যাদেরকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি তারা ইচ্ছা করলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তারা নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে অংশ গ্রহণ করতে পারে।তাই এবার স্বতন্ত্রপ্রাথীর হিসেবে যারা আওয়মী লীগের মনোনয়ন পায়নি তারা স্বতন্ত্রপ্রাথীর হিসেবে ভোটে প্রতিদ্নদ্নিতা করছে। প্রায় প্রতিটি এলাকায় এর সংখ্যা দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হবে বলে কমিশন সূত্রে জানা যায়।ার এই সুযোগ কাজে লাগনোর পায়তারা করছে বিএনপি জামায়াত শিবির। কেননা তাদের অংক হলো বেশীর ভাগ আওয়ামীপন্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের ভোট কাটবে। তাই ভোট কাটকাটির রসায়ন হলো স্বতন্ত্রপ্রার্থী আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কিছু কিছু ভোট পেলে এর সঙ্গে বিএনপি–জামায়াতের ভোট যোগ হলে খুব সহজেই আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীককে হারানো সম্ভব হবে বলে তারা মনে করছেন।
আবার দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় এটা দেখাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ব্যানারে অনিয়মের অভিযোগ এনে ভোট কেন্দ্রে নাশকতার ছক কষছেন তারা। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে যুদ্ধাপরাধী ও বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যায় জড়িতদের পরিবারগুলো। জনসাধারণের মধ্যে আওয়ামী লীগের কোন সমর্থন নেই এবং দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়, এটা বিদেশীদের দেখাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ওপর বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী ভর করেছে। সরেজমিন অনুসন্ধানে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশের কলাপাড়া ও রাঙ্গাবলী উপজেলা নিয়ে গঠিত পটুয়াখালী –৪ আসনের আওয়ামী লীগের কজন বিদ্রোহী সতন্ত্র প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী পক্ষে নেমেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান হত্যার দায়ে ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়া মেজর (অব.) একেএম মহিউদ্দীন আহমেদের ভাই আবির হোসেন তালুকদার সহ সকল আত্মীয় স্বজন। একই সঙ্গে ইসলামপন্থী মৌলবাদী সংগঠন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ও বিএনপির নেতারাও উল্লেখিত বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রর্থীর পক্ষে নেমেছেন।
এ ব্যাপারে রাঙ্গাবালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুজ্জামান মামুন বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনি ও রাজাকার পরিবারের সদস্যরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে নেমেছেন। এর সঙ্গে সুবিধাবাদী অনেক আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীও স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন বলে দেখা যাচ্ছে।
একই অবস্থা পিরোজপুর–১ আসনের। আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী শ.ম. রেজাউল করিমের বিপক্ষে নেমেছে যুদ্ধাপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদন্ডে দন্ডিত দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর পরিবার। কারাগারে সাজা ভোগরত অবস্থায় সাঈদী মারা যান। তাই আওয়ামী লীগের নৌকাকে হারাতে মরিয়া তার পরিবার। গোপনে সাঈদীর সমর্থক ও জামায়াতে ইসলামের নেতাকর্মীদের নামিয়ে দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে এম এ আউয়ালের পক্ষে। বর্তমানে এ কে এম এ আউয়াল পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাই আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন।
পাবনা–১ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু। তার বিরুদ্ধে ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন অধ্যাপক আবু সাইয়িদ। আবু সাইয়িদ ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাবনা–১ আসন থেকে বিজয়ী হন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের নায়েবে আমীর মতিউর রহমান নিজামী। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে অধ্যাপক সাইয়িদকে বাদ দিয়ে শামসুল হক টুকুকে মনোনয়ন দিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ।
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবু সাইয়িদ বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন। সে সময় শামসুল হক টুকুর কাছে অধ্যাপক সাইয়িদ হেরে যান। কিন্তু এবার মানবতাবিরোধী (যুদ্ধাপরাধ) অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ২০১৬ সালের ১১ মে মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়া মতিউর রহমান নিজামীর পরিবার আওয়ামী লীগের নৌকাকে হারাতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে। বিএনপি সরকারের সময় মতিউর রহমান নিজামী কৃষি ও শিল্প মন্ত্রী ছিলেন। তাই এলাকায় তার পরিবারের শক্ত অবস্থানও রয়েছে। এছাড়া বিএনপি সহ এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে আওয়ামী লীগের একাংশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগ পন্থী এক সাংবাদিক নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে দলের কারো বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না, এমন ইঙ্গিত দেয়ায় দলের ভেতর থেকে কয়েকশ হেবিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। আর বিএনপি ও জামায়াত যেহেতু মাঠের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে পারছে না, তাই স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য বিকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছে। কারণ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হলে তারা নিরবে তাদের দলীয় কর্মকান্ড পরিচলনা করতে পারবে। তাই মুখে ভোট বর্জন বা কেন্দ্রে না যাওয়ার প্রচারণা চালালেও বাস্তবে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বিজয়ী করে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিডি/ভয়েস