চোখে মোটা কালো ফ্রেমের চশমা। পরনে সাদা ধুতি ও পঞ্জাবি, তার উপর আলতো একটা কাশ্মীরি শাল জড়ানো। হাতে চারমিনার নিয়ে যে লোকটা বসে আছেন উনিই তো ব্যোমকেশ বক্সী। তবে তাঁকে লোক বলা চলে না, প্রত্যেক বাঙালির ‘ঘরের মানুষ’ এই সত্যান্বেষী।

“তাহার বয়স বোধকরি তেইশ-চব্বিশ হইবে, দেখিলে শিক্ষিত ভদ্রলোক বলিয়া মনে হয়। গায়ের রঙ ফরসা, বেশ সুশ্রী সুগঠিত চেহারা-মুখে চোখে বুদ্ধির একটা ছাপ আছে।”- বর্ণনাটি ব্যোমকেশ বক্সীর হলেও স্রষ্টা শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরুণ বয়স বললেও ভুল বলা হয়না। তা যাবেন নাকি ব্যোমকেশ বক্সীর বাড়ি?

সাইন বোর্ডটা ধুলোমাখা, লেখাগুলোও আবছা হয়ে গেছে। যা টিকে আছে তা হল ঐতিহ্য আর ইতিহাসের মেলবন্ধন। মধ্য় কলকাতার একশো বছরেরও বেশি পুরনো এই বাড়িই ব্যোমকেশ বক্সীর জন্মস্থান। ১৯৩০ সাল নাগাদ এই বাড়ির দোতলার তিন নম্বর ঘরেই বসে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের অমর সৃষ্টি “ব্যোমকেশ বক্সী”। যা কবেই কাল্পনিক চরিত্রের বেড়াজাল কাটিয়ে বাঙালীয়ানার অংশ হয়ে গেছে।

এই শহরের কেন্দ্রস্থলে এমন একটি পাড়া আছে যার একদিকে  মারওয়াড়ি সম্প্রদায়ের বাস। অন্যদিকে খোলার বস্তি এবং তৃতীয় দিকে তির্যক চক্ষু পীতবর্ণ চিনাদের উপনিবেশ। এই ত্রিবেণী সঙ্গমের মধ্যবর্তী পাড়ার একটি “মেসবাড়ি” হল ব্যোমকেশ বক্সীর আসল ঠিকানা। নাম “প্রেসিডেন্সি বোর্ডিং হাউস”! ৬৬,হ্যারিসন রোড, কলকাতা-০৯। এখন যদিও নাম বদলে ৬৬, মহাত্মা গান্ধী রোড।

“সত্যবতী, এক কাপ চা,পুঁটিরাম দুটো খাস্তা কচুরী।” ঘুম থেকেই উঠে ব্যোমকেশের প্রতিদিনের এই উক্তি। স্ত্রীর হাতের চা খেয়েই এই বারান্দা থেকেই কাগজ হাতে সত্যান্বেষীর দিন শুরু হতো। এ বাড়ির ধুলো, ঘড়ি, খড়খড়ি, সিড়ি, দেওয়াল সবকিছুই ব্যোমকেশময়। হবে না! এখানেই তো সহকারী সমেত থাকতেন স্বয়ং শরদিন্দু।

Source-ZEENEWS