এম এ রহিম-বেনাপোল:-
ভারতের পেট্রাপোল ও বাংলাদেশের বেনাপোল সিমান্ত পথে ভারতে ভ্রমণ করতে গিয়ে পাসপোর্ট যাত্রীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ, অনিয়ম, সীমাহীন হয়ারানী, দালালদের দৌড়াত্ব্য, ইমেগ্রেসন-কাস্টমস লোকজনের দুর্ব্যবহার, পুলিশ বিজিবি ও আনসারে মত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যদের অহেতুক কর্মকাণ্ডে বিড়ম্বনা এখন যেন নিত্য যাত্রীদের ললাটের লিখন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দু দেশের আন্তর্জাতিক মানের এই মডারেট সিমান্ত বন্দরে অব্যবস্থাপণা, সীমাহীন অবহেলা আর লাঞ্চনা কারণে যাত্রিরা এই পথে ভারত ভ্রমণে যেতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। অথচ এখান থেকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় করছে দু’দেশের সরকার। তার পরেও একটি প্রতিবেশী দেশে ভ্রমণ করতে গিয়ে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সারিবদ্ধ লাইনে দাড়িয়ে যাত্রীদের এমন নাজেহাল হতে হয় যা সভ্য সমাজে ভাবতে অবাক লাগে। বিশেষ করে সিনিয়ার সিটিজেন, নারি ও শিশুদের শোচনীয় অবস্থা চোখে না দেখলে বোঝা যাবেনা। দিনের পর দিন অব্যাহত রয়েছে এই অব্যবস্থা। দেদার রাজস্ব আয় করলেও দু’দেশেরই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এর প্রতিকারে বিন্দুমাত্রও পদক্ষেপ নিচ্ছেনা। ওই দু’সিমান্তে এত যাত্রীর চাপ ও দুর্বস্থা দেখতে গিয়ে যে কেঊ ভাববেন, এ যেন অন্ধকার যুগের সেই প্রচ্ছন্ন চিত্র। বিশেষ করে ঈদের আগে ও ঈদ পরবর্তী যাত্রীদের এমন গভীর রাত পর্যন্ত যাত্রীদের কঠিন দুর্দশায় সবচেয়ে বেশী পড়তে হয়েছে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। গভীর রাত পর্যন্ত যাত্রীদের মাঝে ছিল মারাত্মক নিরাপত্তা ঝুকিও। কিছুতেই যেন এই দুর্বস্থার অবসান হচ্ছেনা। যাত্রীরা কার কাছে বলবে তাদের এই কষ্টের কাহিনী। এখানে যারা দায়িত্বে আছেন তার তো সবাই শাহেনশাহ তাদের কাছে বলেও কোন লাভ হচ্ছেনা, কারণ তারাই এই জটিলতার সৃষ্টির জন্য দাযী। এই ভাবে শারীরিক যুদ্ধ করে ভ্রমণ করার মানেটাই বুঝতে পারছেনা ভুক্তভোগিরা।
প্রতিনিয়ত দালাল আর টাউটদের খপ্পরে পড়ে ঘন্টার ঘন্টা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়ছেন অনেকে। প্রতিনিয়ত ঘটছে অনাকাঙ্খিত ঘটনা। তারপরও রয়েছে পরিবহণগুলোর টিকিট বিক্রির কলোবাজারী ও অতিরিক্ত মুনাফা লাভের জন্য টিকেট মওজুদ করে রাখ মত যঘণ্য কর্মকাণ্ডেও অতিষ্ট যাত্রি সাধারণ।। বিকল্প পথে বেশী ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন যাত্রীরা। পরিবার পরিজন নিয়ে ভারত ভ্রমণে গিয়ে স্মরণকালের ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে তাদের, এমন কাহিনী জানালেন ভারত থেকে ফেরা হাসিনা বেগম, ফরিদ মোল্লা ও কাশেম আলী।
ঈদের দীর্ঘছুটিতে দেশের অন্য সিমান্ত পথে যাত্রী যাতায়াত বন্ধ থাকায় আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট বেনাপোল ও পেট্টাপোল বন্দর দিয়ে চলা-ফেরা বৃদ্ধিপায় । চিকিৎসা ভ্রমণ ব্যাবসা চাকুরী শিক্ষা সহ বিভিন্ন কাজে প্রতিদিন ৫থেকে ৭হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন এ বন্দর দিয়ে। এদিকে ভ্রমণ ভিসা চালু হওয়ার পর থেকে ভারতে বাংলাদেশী যাত্রিদের ভ্রমণ বেড়ে যায়। গত দুই সপ্তাহ ধরে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইনে ভোগান্তি চরমে পৌছায়। চাপ সামলাতে হিমশিম খায় প্রশাসনও। এ সুযোগে কিছু অসাধু প্রশাসনের সদস্য ও দালাল চক্রের কারণে দুর্ভোগ আরও বাড়ে। ছুটি শেষ হওয়ায় ভারত ফেরা যাত্রী চাপ কয়েকগুণ বেড়েছে। সব চেয়ে অনেক বেশী সময় লাগছে ভারতের পেট্টাপোল ইমগ্রেশনে। গভীর রাত পর্যন্ত সেখানে যাত্রি আটকে থাকায় বেনাপোলে ঢুঁকেও তাদের একই অবস্থার পড়তে হয়। এ সময় সবার আগে তারাতারি কাজ করিয়ে দেয়ার কথা বলে দালাদের খপ্পড়ে পরে দ্বিগুণ থেকে চারগুন অর্থ গুণতে হয় তাদেরকে। তাদের এই মহা দুর্ভোগের কথা লিখে শেষ করা যাবেনা। এই জন্য দালাল চক্রকে দায়ী করেন ভুক্তভোগী যাত্রীরা।
এ ছাড়াও পেট্রাপোল ইমিগ্রেসনে ধীরগতি-নেট সমস্যা সহ অবাধ দালাল চক্রের কারণে যাত্রি ভোগান্তি বাড়ছে বলে জানান বন্দর ও ইমিগ্রেশন সংশ্লিষ্টরা। ভোগান্তিতে পড়া যাত্রীরা বলেন,প্রশাসনের মুখ ঝামটা ও তাদে মারমুখি আচরণ চরমভাবে বিক্ষুদ্ধ হন যাত্রিরা। পরিবার পরিজনের সামনে অসন্মানজনক আচরণে ক্ষোভও প্রকাশ করেন তারা। সরকারকে ভ্রমণ কর দিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের অনুমতি নিয়ে প্রতিবেশী দেশটিতে ভ্রমনে কেণ এমন আচরণ হচ্ছে, কিন্তু জবাব দেয়ার কেউ নেই। ভারত সরকারের সেবায় মান কেন এত নাজুক,প্রশাসনের সদস্যদের সামনে কেন হয়রানি ও ভোগান্তির স্বীকার হবে যাত্রী। এ দায় কার ? এমন প্রশ্ন ভুক্তভোগী বাংলাদেশী যাত্রীদের। এইভাবে চলতে থাকলে বেনাপোল ও পেট্রাপোল দিয়ে পর্যটকদের ভ্রমণে উৎসাহ কমবে। আর এই উৎসাহ হারালে সরকারী রাজস্ব আদায়ে কি পরিমান কমে আসতে পারে তা দু’দেশের সরকারকে ভেবে দেখতে হবে। ৫’শ থেকে দু হাজার টাকা দিলেই লাইন ছাড়া পার হওয়া যায়। ফলে টাকা না দিলেই ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত লাইনে আটকে খেয়ে না খেয়ে অমানবিক সময় কাটাতে হচ্ছে যাত্রীদের। পেট্টাপোল ও বেনাপোল চেকপোস্টে বিজিবি বিএসএফ কাস্টম ও ইমিগ্রেসন পুলিশ সহ থানা পুলিশের সদস্য ও আনসার এবং আর্মড পুলিশ দায়িত্ব পালন করলেও কেন শৃঙ্খলা থাকবেনা লাইনে। কেন পোহাতে হবে নিরীহ যাত্রীদের দুর্ভোগ ও হয়রানি। এমনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন যাত্রীরা। সীমান্ত পরিচালনায় দুদেশেরই শৃঙ্খলাপরায়ণ বিশেষ বাহিনীর দায়িত্বে থাকলে এই সমস্যার সমাধান হবে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন।
বেনাপোল বন্দর উপ পরিচালক আব্দুল জলিল জানান,বাংলাদেশ অংশে যাত্রী দুর্ভোগ কমাতে চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। রাতদিন যাত্রিসেবা বাড়ানো হয়েছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সাথে সমস্যা সমাধানে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ইমিগ্রেসন কর্তৃপক্ষ জানান বেনাপোল পেট্টাপোল দিয়ে যাত্রীসেবায় আন্তরিকতার সাথে কাজ করা হচ্ছে। গভীর রাত পর্যন্তও খোলা রাখা হয়েছে ডেক্স। বাড়ানো হয়েছে সেবা।
বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি কামাল ভুইয়া জানান যাত্রী নিরাপত্তা সহ সব ধরণের সেবায় কাজ করছেন প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থা।
উল্লেখ্য, বেনাপোল ও পেট্টাপোল বন্দর দিয়ে চিকিৎসা-ভ্রমণ-ব্যবসা-চাকুরীও শিক্ষাসহ বিভিন্ন কাজে প্রতিদিন ৫থেকে ৭হাজার যাত্রী যাতায়াত করে থাকে। এদিকে ভ্রমণ ভিসা চালু হওয়ায় ভারত গমন বেড়ে যায় সব চেয়ে বেশী। বিশেষ করে গত দুই সপ্তাহ ধরে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইনের ভোগান্তি চরমে পৌছায়।