প্রণব ভট্রাচার্য্য
কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া নির্বিঘ্নে দুটি রাজ্যে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।বলিউড অভিনেতা সোনু সুদের বিরূদ্ধে পাঞ্জাবের মোগা বিধানসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন নির্বাচনী কেন্দ্রে ঢোকার চেষ্টা করছেন রবিবার এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সোনু সুদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেয় নির্বাচন কমিশন। এমনকি মাঝপথে তার গাড়িও আটকে দেওয়া হয়। ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাড়তে তাকে আটকে রাখা হয়। জানাঘেছে, পাঞ্জাবের মোগা কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের টিকেটে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সোনু সুদের বোন মালবিকা সুদ।অভিনেতা তার বোনের পক্ষে ভোটারদের প্রভাবিত করছিলেন বলে সেখানকার নির্বাচনী আধিকারীক জানায়।যদিও ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন সোনু সুদ ।
ধাপে ধাপে চলছে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। রবিবার একদিকে যেমন ছিল পঞ্জাবের বিধানসভা নির্বাচন । তেমনই আবার উত্তর প্রদেশে যে সাত দফায় নির্বাচন হচ্ছে, এদিন তার তৃতীয় দফায় ভোটগ্রহণ শেষ হলো। উত্তর প্রদেশে তৃতীয় দফার বিধানসভা নির্বাচনে মোট ১৬টি জেলার ৫৯টি কেন্দ্রে মোট ৬২৭ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করবে ২.১৫ কোটিরও বেশি ভোটারের ভোটে। এই দফায় উত্তরপ্রদেশে তারকা প্রার্থীদের মধ্যে অন্যতম হলেন সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব। অন্যদিকে, পঞ্জাবে এক দফাতেই ১১৭টি কেন্দ্রে মোট ১৩০৪ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হবে। ভোট গ্রহণের জন্য মোট ২৪ হাজার ৭৪০টি বুথ তৈরি করা হয়েছে। এরমধ্যে ২০১৩টি বুথকে স্পর্শকাতর হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে পাঞ্জাবে।
উত্তর প্রদেশে সকাল সাতটা থেকেই ভোট গ্রহণ শুরু হলেও, পঞ্জাবের বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে সকাল ৮টা থেকে। দুই রাজ্যেই সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অব্যাহত থাকে। পঞ্জাবের বিধানসভা নির্বাচনে এবার তারকা প্রার্থীদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিং চন্নি। তিনি চমকৌর সাহিব ও ভাদৌর কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়েছেন। নভজ্যোত সিং সিধু পূর্ব অমৃতসর থেকে প্রার্থী হয়েছেন। অন্যদিকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পঞ্জাব লোক কংগ্রেসের প্রধান ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং পাটিয়ালা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়েছেন।
একদিকে পঞ্জাবে যেখানে লড়াই বহুমুখী, সেখানেই উত্তর প্রদেশের গদি দখলের লড়াই মূলত বিজেপি ও সমাজবাদী পার্টির মধ্যেই। তৃতীয় প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে রয়েছে কংগ্রেস। পঞ্জাবে শাসক দল কংগ্রেস। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে বিজেপি, আপ আদমি পার্টি, শিরোমণি আকালি দলের মতো একাধিক ছোট বড় দল। ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংয়ের কাছে। কারণ দীর্ঘ ৪০ বছর পর্যন্ত কংগ্রেসের সঙ্গে যে দীর্ঘ সম্পর্ক ছিল, তা ছিন্ন করে বেরিয়ে এসেছেন গত বছরই। তার নতুন দল পঞ্জাব লোক কংগ্রেস বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধে লড়ছে।
ভোট দিতে এসে পাঞ্জাব নির্বাচনের ফল নিয়ে আশাবাদী শিরোমণি আকালি দলের নেতা সুখবীর সিং । তিনি বলেন, রাজ্যে শিরোমণি আকালি দল ও বিএসপির জোরাল ঢেউ দেখা যাচ্ছে।
পঞ্জাবের লুধিয়ানায় ভোট দিয়ে বেরিয়ে এসে কংগ্রেস নেতা ম।ণীশ তিওয়ারি বলেন, “আমি পঞ্জাবের সকল বাসিন্দাকে অনুরোধ করছি যে ধর্ম ও জাতপাতের ভেদাভেদ না করে পঞ্জাববাসীর স্বার্থের কথা ভেবে ভোট দিন।” পঞ্জাবের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হবে কংগ্রেসই, এই বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী কংগ্রেস নেতা সুনীল জাখর। এদিন তিনি ফাজিলকা কেন্দ্রের একটি বুথে ভোট দিয়ে বলেন যে, যারা পঞ্জাব ভাঙার পরিকল্পনা করছেন, তাদের কড়া জবাব দেবে রাজ্যবাসী।
উত্তরপ্রদেশের আর বাকি চার দফা ভোট। তবে সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদবকে এখন থেকেই আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছে। সর্বভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমকে তিনি বললেন, ‘প্রথম দুই দফাতেই আমরা একটা সেঞ্চুরি করে ফেলেছি। আগামী দুই দফাতেও আমরা অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকব।’ আজ যে অংশে (১৬টি জেলার ৫৯টি আসন) ভোটগ্রহণ চলছে, ২০১৭ সালে সেখানে মাত্র ন’টি আসনে জিতেছিল সপা, তাতেও আত্মবিশ্বাসে ভাটা পড়েনি অখিলেশের, বরং এখান থেকেই সবথেক বেশি ভোট পাবেন বলে দাবি করলেন তিনি। এবারই প্রথম বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব। মইনপুরী জেলার কারহাল কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়েছেন তিনি। বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে তিনি যে লড়াইয়ে নেমেছেন, তাতে জয়লাভের জন্য এই কেন্দ্রেও জয়লাভ করাটা তার জন্য অত্যন্ত জরুরী।
উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফায় ভোট দিলেন প্রগতিশীল সমাজবাদী পার্টির নেতা শিবপাল যাদব। ভোট দিয়ে তিনি বলেন, “তৃতীয় দফার ভোটেই বোঝা যাচ্ছে যে ২০২২ সালে অখিলেশ যাদবই উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হবেন। ওনাকে কেউ আটকাতে পারবেন না। ৩০০-রও বেশি আসন পেয়ে সরকার গড়বে সমাজবাদী পার্টি।”
উত্তর প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা সলমন খুরশিদ ও তার স্ত্রী লুইসি খুরশিদ। তিনি ফারুকাবাদ সদর কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন। কংগ্রেস নেতা স্ত্রী তথা প্রার্থী লুইসি খুরশিদ বলেন, “উৎসাহিত বোধ করছি। প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর জন্যই যেখানেই আমি যাচ্ছি, দেখছি মহিলারাল মতদানে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।”
পঞ্জাবের বিধানসভা নির্বাচনে এবার তারকা প্রার্থীদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিং চন্নি। তিনি চমকৌর সাহিব ও ভাদৌর কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়েছেন। নভজ্যোত সিং সিধু পূর্ব অমৃতসর থেকে প্রার্থী হয়েছেন। অন্যদিকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পঞ্জাব লোক কংগ্রেসের প্রধান ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং পাটিয়ালা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়েছেন।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন যদি ফাইনাল হয়, উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনকে ‘সেমিফাইনাল’ হিসেবে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। যোগী আদিত্যনাথ ফের ক্ষমতায় আসবে কি না তা সময় বলবে। তবে এবার গেরুয়া শিবিরকে কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে ফেলেছে অখিলেশের দল তা একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন সবাই। বিশেষ করে পশ্চিম উত্তর প্রদেশে, যেখানে কৃষক অসন্তোষ দানা বেঁধেছিল, সেখানে বিজেপির অবস্থা অনেকটাই সঙ্গিন। তা ছাড়া নির্বাচনের কিছুদিন আগেই দলিতদের সপামুখীর তাস খেলে বিজেপিকে অনেকটাই চাপে ফেলেছে অখিলেশ।