নিজস্ব প্রতিবেদন
কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণার মাত্র একদিনের মধ্যে তার কৃতিত্ব নিতে শুরু হয়ে গেছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কাড়াকাড়ি। কংগ্রেস নেতা রাহুল নিজের পুরনো বক্তব্য রি-টুইট করে বোঝাতে চাইলেন, কংগ্রেসের চাপেই পিছু হঠেছে মোদী সরকার। মোদীকে নিশানা করে সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব, আপ-র কেজরীরাওয়াল মনে করছেন ওই আন্দোলনের অঙ্গ হিসেবে তাদের অবদান কম নয়।কৃষকদের শুভেচ্ছা জানিয়ে কবিতা লিখলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ও।
কৃষি আইন নিয়ে শুরু থেকেই অনড় ছিল কেন্দ্র। তা হলে শেষ পর্যন্ত কার চাপে পিছু হঠল মোদী সরকার? জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পরই, কৃতিত্ব নিতে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে। শুক্রবার সকালেই টুইটে বিজেপিকে নিশানা করেন রাহুল গান্ধী। তিনি লেখেন, দেশের অন্নদাতারা সত্যাগ্রহের মাধ্যমে অহংকারের দর্প ভেঙ্গে দিয়েছেন। অন্যয়ের বিরুদ্ধে এই জয়কে অভিনন্দন। সেই সঙ্গে নিজের পুরনো বক্তব্য রি-টুইট করে রাহুল যেন বোঝাতে চাইলেন, কংগ্রেসের চাপেই কৃষি আইন নিয়ে পিছু হঠেছে মোদী সরকার।আর কৃষি আইন প্রত্যাহারের জন্য রাহুলকে কৃতিত্ব দিলেন বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও।
কৃষি আইন নিয়ে পিছু হঠার দিনে গেরুয়া শিবিরকে নিশানা করেছেন অখিলেশ যাদব, অরবিন্দ কেজরিওয়ালও। শুরুর দিন থেকেই কৃষক আন্দোলনের প্রতি সমর্থন ছিল তৃণমূলের। দিল্লির সিঙ্ঘু সীমানায় আন্দোলনকারী কৃষকদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার ফোনে কথা বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্নে এসে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন কৃষক সংগঠনের নেতা রাকেশ টিকায়েত। তাই আইন প্রত্যাহারের নিয়ে, আন্নদাতাদের জন্য কবিতা লিখলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
কৃষক আন্দোলনকে অভিনন্দন জানিয়ে তৃণমূল-র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায় টুইটে লেখেন, কৃষকদের দীর্ঘ ও কঠিন সংগ্রাম, সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে তাদের দৃঢ়তা এবং সংকল্প বিজেপিকে তাদের আসল দিশা দেখিয়েছে।
কৃষকরাই আন্দোলনকে সাফল্যের পথ দেখিয়েছে। তার জন্য অবশ্য তৃণমূলকে কোন নম্বর দিতে নারাজ বাম কৃষক সংগঠনের নেতা হান্নান মোল্লা। কৃষি আন্দোলন নিয়ে তৃণমূলকে বিঁধেছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি ড. সুকান্ত মজুমদার।
অন্নদাতাদের দীর্ঘ আন্দোলন। শেষমেষ তাতেই সাফল্য। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গণ আন্দোলনের সাফল্যে নেতারা ভাগ বসাতে চাইবেন, তা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লাভের ফসল কার ঘরে উঠবে, তা নিয়ে অনেক প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে।
এদিকে কৃষি আইন প্রত্যাহারের পরে রাজনৈতিক জল্পনা শুরু হয়েছে ৩৭০ ধারা, সিএএ ও এনআরসি ইস্যু নিয়েও কি পিছু হটতে হবে বিজেপি সরকার ? প্রায় দেড় বছর ধরে লাগাতার আন্দোলনের জেরে শেষপর্যন্ত ক্ষমা চেয়ে বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহার করে কেন্দ্র। এর পরেই রাজনৈতিক মহলে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে, কাশ্মীরকে ৩৭০ ধারার বিশেষ মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া, নাগরিকত্ব সংশোধন আইন ও নাগরিকপঞ্জিকরণ(এনআরসি)আইনও কি বাতিলের তালিকায় পড়তে চলেছে? সামাজিক মিডিয়ায়ও এ নিয়ে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন।
২০১৯ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর একাধিক ‘সংস্কারমুখী’ পদক্ষেপ নিয়েছিল বিজেপি। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করা হয়। অবলুপ্ত হয়েছিল সংবিধানের ৩৭০ ও ১৫এ ধারা। এই সিদ্ধান্তের বিরূদ্ধেও ব্যাপক বিরোধিতা হয়। দীর্ঘদিন গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছিল কাশ্মীরের নেতা–নেত্রীদের। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ভূস্বর্গে ইন্টারনেট পরিষেবাও। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা চলছে এখনও, কিন্তু নিজেদের অবস্থানে অনড় মোদি সরকার।
গত নির্বাচনের আগে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন পাশ করা হয়। যেখানে বলা হয়েছিল, প্রতিবেশী দেশ থেকে আগত অমুসলিম শরনার্থীদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে নাগরিকত্ব পেতে সংখ্যালঘুদের একাধিক নথিপত্র দেখানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। এমনকী, নাগরিকপঞ্জি তৈরিরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু কেন্দ্রের এই দুই আইনের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু হয়। অবরোধ, বিক্ষোভ থেকে মামলা হয় শীর্ষ আদালতেও। রাজনৈতিক চাপে দু’টি সিদ্ধান্তকেই কার্যত স্থগিত রাখা হয়। কেন্দ্রের বক্তব্য কোভিড পরিস্থিতির কারণেই ওই আইন কার্যকর সম্ভব হয়নি। পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশে সামনেই ভোট। লাগাতার গণআন্দোলনের জেরে কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হলেন প্রধানমন্ত্রী। রাজনৈতিক মহল বলছে,কাশ্মিরে ৩৭০ ধারা ফেরানো এবং সিএএ ও এনআরসি বাতিলের দাবিতে যদি নতুন করে গণআন্দোলন শুরু হলে বিজেপি সরকার ।
এদিকে তিনটি কৃষিআইন বাতিলের সিদ্ধান্তকে উদযাপন করবে কংগ্রেস।শনিবার দেশব্যাপী এই উৎসব পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস। দলীয় বিবৃতিতে জানানো হয়, অত্যাচারী সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াই এবং জয়ে কংগ্রেস এদিন কিষাণ বিজয় দিবস পালন করছে দেশজুড়ে। এর আগে দেশব্যাপী পেট্রোল-ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে কংগ্রেসের আন্দোলনের জেরে পেট্রোল ডিজেলের দাম নিয়ে দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু হলে কেন্দ্রীয় সরকার জ্বালানির দামও কমাতে বাধ্য হয় ৷
ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে মহাত্মা গান্ধী যেমন ‘ডান্ডি মার্চ’-করেছিল সেরকমভাবেই দলীয় নেতা-কর্মীদের দ্বারা পদযাত্রা ও মিছিল করার নির্দেশ দিয়েছে কংগ্রেস। কৃষি আইন বাতিলের পর কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধী বলেন, “প্রায় ১২ মাসের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের পর, আজ ৬২ কোটি ‘অন্নদাতা’-র সংগ্রাম ও ইচ্ছাশক্তি, দেশের কৃষক ও ক্ষেতমজুরদের শেষ পর্যন্ত জয় এনে দিয়েছে’।
কংগ্রেসের কিষাণ বিজয় দিবস উদযাপন
যাপণশনিবার ধুমধাম করে ‘কিসান বিজয় দিবস’ উদযাপন করছে কংগ্রেস। কৃষকদের উদ্যোগে দেশজুড়ে বিজয় মিছিল বের হয়। আন্দোলনের দীর্ঘ সময়ে যে ৭০০ কৃষকের মৃত্যু হয়েছিল, তাঁদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন কংগ্রেস নেতারা। মৃত কৃষকদের স্মৃতির সন্মানে হবে মোমবাতি মিছিলও।
অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক কেসি ভেণুগোপাল প্রত্যেকটি রাজ্যের দলীয় কমিটিকে জেলা এবং ব্লকস্তরে বিজয় মিছিল বের করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাজ্য ইউনিটের প্রতি চিঠিতে ভেণুগোপাল বলেছেন, কেন্দ্রের কঠোর কৃষি আইন প্রত্যাহার কৃষকদের জয় এবং কৃষকদের প্রতিবাদ এবং আত্মত্যাগের ফল। আইন প্রত্যাহারের নেপথ্যে রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেসের নেতৃত্বে সংগঠিত