নিজস্ব প্রতিবেদন

ভারতের ছোট বড় আঞ্চলিক ও জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর লক্ষ্য ও মিশন ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে ঘিরে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় রাজনীতিতে দিল্লির তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টি  প্রধান অরবিন্দ কেজরীবালের মত একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির প্রভাব  অনেকটাই স্পষ্ট ও দৃশ্যমান। এরই মধ্যে একটু একটু করে নিজের পায়ের তলার রাজনৈতিক মাটি তিনি অনেকটাই শক্ত করেছেন।

সাম্প্রতিক পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে নিজেদের দখলে থাকা ৪ টি রাজ্যই ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি। আপ কংগ্রেসের হাতে তাকা পাঞ্জাব দখল করেছে, এই প্রথম কোনও আঞ্চলিক দল হিসেবে দ্বিতীয় একটি রাজ্যে ক্ষমতা দখল করার নজির সৃষ্টি করেছে। দেশের যে কয়েকটি সীমিত রাজ্যে কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল, পঞ্জাব তার অন্যতম। তবে এবারের  আমাদমি পার্টির ঝড়ে পঞ্জাব থেকে সাফ হয়ে যাওয়ার পথেই কংগ্রেস। ১১৭ আসনের পঞ্জাবে কংগ্রেস মাত্র ১৮ টি আসনে জয়ী হয়েছিল, সেখানে কেজরীবালের আপ ৯২ টি আসনে জিতে কংগ্রেসের থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে। অন্যদিকে গোয়াতে কংগ্রেস প্রধান বিরোধী দল ছিল, সেখানেও লড়াই করে ২ আসনে জিতে নিয়েছেন অরবিন্দ কেজরীবাল। কংগ্রেস  দুর্বল হয়েছে।

এবার আরও একটি কংগ্রেস শাসিত রাজ্য  রাজস্থানে আম আদমি পার্টির গোড়াপত্তন হতে চলেছে।  এই খবর সামনে আসার পর থেকেই রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে যে কেজরীবাল কি বিজেপির দেখান পথে কংগ্রেস মুক্ত ভারত চাইছেন? কংগ্রেস শাসিত রাজস্থানে আগামী বছরই বিধানসভা নির্বাচন। তার আগেই কংগ্রেস শাসিত রাজ্যে সংগঠন মজবুত করতে জয়পুরে দু’দিনের সম্মলেন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আপ। আপের রাজ্যসভা সাংসদ তথা দলের তরফে রাজস্থানের ইনচার্জ সঞ্জয় সিং ওই সম্মলনে দলীয় কর্মীদের বোঝাবেন যে কী ভাবে আপ সরকার ক্ষমতায় থাকা রাজ্যগুলিতে কাজ করেছে। ২৬ ও ২৭ মার্চ এই সম্মলেন হবে বলেই জানা গিয়েছে।

রাজস্থানের আপের দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, রাজ্যে দ্বারকা থেকে নির্বাচিত বিধায়ক বিনয় মিশ্রকেই  রাজস্থানের এই কর্মসূচির দায়িত্ব দেওয়া হবে। আপের এই কর্মসূচির নাম রাখা হয়েছে ‘বিজয় উৎসব’। রাজস্থানের দলের সকল কর্মী, সমর্থক ও নেতৃত্বকে এই সমাবেশে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। রাজস্থানের আপ নেতৃত্ব জানিয়েছে দলের সংগঠনকে আরও মজবুত করতে দ্রুত সেখানে যোগদান কর্মসূচি আয়োজন করা হবে। এখন ২০২৩ সালের রাজস্থানের নির্বাচনে আম আদমি পার্টি আদৌ কংগ্রেসকে ধাক্কা দিতে পারে কি না সেদিকেই নজর থাকবে সকলের।

এ ছাড়া ২০২৩-র ছত্তীসগড়-র বিধানসভা নির্বাচনেও আম আদমি পার্টি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে,  দলীয় সূত্রে এমনটাই জানানো  হয়েছে। সূত্র জানায়, ছত্তীসগড়েও আপের ঘাঁটি গড়ার প্রথম ধাপ হিসাবে আপ নেতা তথা দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী গোপাল রাই রবিবার দুদিনের রাজ্য সফর করছেন।  সেখান থেকেই তিনি আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনের  জন্য নির্বাচনী প্রচারের প্রস্তুতি শুরু করেছেন।  দুদিনের সফরকালিন তিনি  ছত্তীসগড়ের আপ কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং নির্বাচনী প্রচার ও আপ-এ বিশাল যোগদান কর্মসূচীর পরিকল্পনা রয়েছে।।

রবিবারই ছত্তীসগঢ়ের রাজধানী রায়পুরে আম আদমি পার্টির রাজ্য কমিটির কার্যালয়ের উদ্বোধন করা হয়। সোমবার রায়পুরেই একটি বিজয় যাত্রার আয়োজন করা হয়েছে পঞ্জাবের বিপুল সাফল্যকে উদযাপন করতে। ওই বিজয় যাত্রাতেও অংশ নেবেন দিল্লির নেতারা।

দিল্লিতে এদিন আপ প্রধান বলেন, ছত্তিষগড় রাজ্যবাসী  বিশেষত মহিলা ও যুব সম্প্রদায় কংগ্রেস সরকারকে নিয়ে অত্যন্ত আশাহত। তারা পরিবর্তন চান। এই রাজ্যটি  ভিন্ন রাজ্য হিসাবে গড়ার পর ১৫ বছর ধরে বিজেপি শাসন করেছে। গত নির্বাচনে মানুষ পরিবর্তন চেয়েই কংগ্রেসকে ক্ষমতায় এনেছিল। কিন্তু বিগত সাড়ে তিন বছরেরও বেশি সময়ে কংগ্রেসও নিজেদের প্রতিশ্রুতি পূরণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। কংগ্রেস নিজেদের অন্তর্দ্বন্দ্ব সামলাতেই ব্যস্ত। এদিকে, রাজ্যবাসীর মনে ক্ষোভ জমছে। তিনি বলেন, বিজেপি ও কংগ্রেসকে সুযোগ দিয়েছেন ছত্তীসগড়বাসী, এবার সময় এসেছে পরিবর্তনের।। আপপ্রধান বলেন, ইতোমধ্যে  ‘গুজরাত ও পশ্চিবঙ্গেও আমাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড শুরু হয়ে গিয়েছে।’