নিজস্ব প্রতিবেদন
বুধবার বিকেলে মুম্বইয়ে এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ারের সঙ্গে বৈঠক করেন তৃণমূল প্রধান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, এনসিপি নেতা প্রফুল প্যাটেল। এদিন তাঁরা প্রায় একঘণ্টা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের টার্গেট স্থির করে মমতা ও পাওয়ার দুজনেই এদিন বিজেপি বিরোধী দলগুলিকে একজোট হওয়ার বার্তা দেন, যা ভারতে বিরোধী ঐক্যের নয়া সমীকরণেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
মঙ্গলবার বিকেলে দু’দিনের সফরে মুম্বই গিয়েছেন মমতা। সন্ধ্যায় মেরিন ড্রাইভে একটি পাঁচতারা হোটেলে তিনি মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের ছেলে আদিত্য ঠাকরে ও শিবসেনা সাংসদ সঞ্জয় রাউতের সঙ্গে বৈঠক করেন। বুধবার দুপুরে মুম্বইয়ে নাগরিক সমাজের বিশিষ্টজনের সঙ্গে্ও বৈঠক করেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। বৈঠকে জাভেদ আখতার, পবন বর্মা, মহেশ ভাট, মেধা পাটেকর, স্বরা ভাস্কর, আদিতি মিত্তল, রিচা চাড্ডাদের মতো রাজনৈতিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকেও বিজেপিকে হারানোর উপায় বাতলে দেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে বলেন, ‘যদি সমস্ত আঞ্চলিক দলগুলো একত্রিত হয়, তাহলে কেন্দ্রথেকে বিজেপিকে পরাজিত করা সহজ হবে। তিনি বলেন, ‘আমার প্রধান লক্ষ্য বিজেপিকে হটানো। তাই প্রশ্নে বিরোধীদের এক হতেই হবে। বিজেপি বাংলায় ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করতে চায়। ধর্মের বিভাজনে হিংসা বাড়ে। আমরা ধর্মের রাজনীতি করি না। আমার লক্ষ্য ভারতের গণতন্ত্রকে রক্ষা করা। নাগরিক সমাজকে আগামী দিনের কথা ভাবতে হবে। আগামী দিনে রাজনীতি কোন খাতে বইবে, তা নাগরিক সমাজকেই ঠিক করতে হবে।’
এরপরই তৃণমূল নেত্রী কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘বিজেপির বিরুদ্ধে টক্কর দেয়ার শক্তি এই মূহুর্তে কংগ্রেস হারিয়ে ফেলেছে।’ জোটের কথা বলতেই উঠে আসে প্রধানমন্ত্রী প্রসঙ্গটি। বিশিষ্ট লেখিকা ও বুদ্ধিজীবী শোভা দে বলেন, বিরোধী ঐক্য হলে কাকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ কারা হবে ?’ এর জবাবে মমতা বন্দোপাধ্যায় জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, ‘এই মূহুর্তে সেটা বড় কথা নয়। গণতন্ত্র রক্ষাই এখন গুরুত্বপূর্ণ । আগামী দিনে পরিস্থিতিই ঠিক করবে দেশে কে হবেন প্রধানমন্ত্রী।’
কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের চাপা সংঘাত বেশ কিছু দিন ধরেই চলছে। সোমবার ১২ বিরোধী নেতাকে রাজ্যসভা থেকে সাসপেন্ড করা নিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে কংগ্রেস। সেই বিবৃতিতে তৃণমূলের কোন উল্লেখ নেই । সেই সাংঘাত এবার আরও প্রকাশ্যে আনলেন তৃণমূল নেত্রী।
সম্প্রতি দিল্লি গিয়েও সোনিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেঘালয়ে কংগ্রেস শিবিবে ফাটল ধরানোর ক্ষেত্রে তৃণমূলকে দায়ি করছে কংগ্রেস। তবে তার পরেও তৃণমূলের সঙ্গে মানিয়ে চলতে আপত্তি নেই বলে জানিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খার্গে। কিন্তু শুরু থেকেই কংগ্রেসর বিরূদ্ধে অব্যাহত বিষোদগার করে চলছে মমতা বন্দোপাধ্যায়। আপনার কি মনে হয় শরদ পাওয়ারের ইউপিএর নেতৃত্ব থাকা উচিত? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে মমতা বলেন, আরে কোথায় ইউপিএ! এর অস্তিত্বই নেই। একুশের নির্বাচনে বামফ্রন্টের সঙ্গে জোট করে বাংলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধেই লড়ছেন অধীর চৌধুরী, আব্দুল মান্নানরা। তাই ২০২৪-এ কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই করতে আগ্রহী নন তৃণমূল নেত্রী। তিনি বলেন, “আমি ভোট ভাগ চাই না। আমি উত্তরপ্রদেশে লড়ছি না। কিন্তু কংগ্রেস বাংলায় আমার বিরুদ্ধে লড়ছে। সিপিএম বাংলায় আমার বিরুদ্ধে লড়ছে। তাহলে আমি গোয়াতে লড়তে পারব না কেন?”
প্রসঙ্গত গত বিধানসভা নির্বাচনে জিতে বাংলায় তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা ঘাসফুল শিবিরের সামনে এখন একটাই লক্ষ্য, ২০২৪-র মিশন। যে করেই হোক কেন্দ্র থেকে বিজেপি সরকার তথা মোদিকে সরাতে হবে। ইতিপূর্বে দিল্লিতেও এই নিয়ে একাধিক বৈঠক করেছেন কংগ্রেসসহ বিরোধীদলগুলোর সাথে। ইতিমধ্যেই ত্রিপুরা, গোয়ার মতো রাজ্যে বিধানসভা ভোটে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তৃণমূল। ত্রিপুরায় বিধানসভা ভোটের আগে পুরনির্বাচনেও অংশ নিয়েছে তৃণমুল কংগ্রেস। মেঘালয়েও তৈরি হচ্ছে সংগঠন। এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাখির চোখ হরিয়ানা রাজ্য। গোয়ার পর এবার হরিয়ানাতেও সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর কাজ শুরু করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। হরিয়ানার উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিকে লক্ষ্য রেখে তৃণমূল কংগ্রেস পরবর্তী সংগঠন বাড়ানোর কাজ করছে সেখানে।
কয়েকদিন আগেই হরিয়ানার প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ অশোক তানওয়ার কংগ্রেস ছেড়ে তৃনমূলে যোগ দিয়েছেন। গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ অশোক ২০১৯ সালে কংগ্রেস ছেড়েছিলেন। তাঁর পাশাপাশি কংগ্রেস ছেড়ে তৃনমূলে যোগ দিয়েছিলেন প্রাক্তন ক্রিকেটার কীর্তি আজাদ। প্রাক্তন জে ডি ইউ নেতা পবন বর্মাও তৃনমূলে যোগদান করেন। দিল্লিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তারা তৃনমূলে যোগ দিয়েছেন।