বাংলাদেশের পক্ষথেকে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন উপ-হাইকমিশনার
নিজস্ব প্রতিনিধি
বঙ্গ রাজনীতিতে আরও এক নক্ষত্রের পতন হলো। চলে গেলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায় । ৭৫ বছর বয়সে এসএসকেএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। দুদিন আগে তাঁর ধমনীতে স্টেন্ট বসানো হয়।এর পর থেকেই তাঁর শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎই শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় তাঁর। বাথরুমে যাওয়ার সময় পুনরায় সে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। ওইদিন রাত ৯:২২ মিনিটে তাঁর মৃত্যু হয়। শুক্রবার হাসপাতাল থেকে ছুটি হওয়ার কথা ছিল তাঁর। তাঁর মরদেহ পার্ক সার্কাসের পিস ওয়াল্ডে রাখা হয়।সকলকে চির বিদায় জানালেন বঙ্গ রাজনীতির চিরসবুজ ব্যক্তিত্ব সুব্রত মুখোপাধ্যায়।
সুব্রত মুখ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মৃত্যুর খবর শুনেই মমতাবন্দোপাধ্যায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন “পার্টি অন্ত প্রাণ ছিলেন সুব্রতদা, দীপাবলীর আলোর দিনে এত বড়ো অন্ধকার নেমে আসবে আমাদের ভাগ্যে ভাবতেও পারিনি।“
চারটি মন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা বর্ষীয়ান দলীয় নেতার মৃত্যুর খবরে শোকাহত হয়ে পড়েন তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা। শোকের ছাযা নেমে আসে সমস্ত রাজনৈতিক মহলেও। শুক্রবার রবীন্দ্র সদনে সকাল ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত তাঁর মরদেহ রাখা হয়। সেখানে তাঁর অসংখ্য অনুরাগী ও রাজনৈতিক সতীর্থরা শেষ শ্রদ্ধা জানায় তাঁকে। সেখান থেকে বিধানসভায় ও তারপর তাঁর মরদেহ বালিগঞ্জের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর কেওড়াতলা শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
প্রসঙ্গত, গত মাসের ২৫ তারিখ শ্বাসকষ্ট জনিত অসুবিধায় এসএসকেএম হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। এরপর তাঁর হৃদরোগের সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বোর্ড গঠন করে চলছিল তাঁর চিকিৎসা। তখনই তাঁর শারীরিক অবস্থা রীতিমতো সংকটজনক হয়। কার্ডিওলজিস্ট বিভাগের আইসিইউ-তে রেখে চিকিৎসা চলছিলো, কিন্তু শে্য রক্ষা হলোনা, রাতে হাসপাতালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। শোকস্তব্ধ তাঁর স্ত্রী ছন্দবাণী মুখোপাধ্যায়। বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে তাঁর পরিবার-পরিজন এবং রাজনৈতিক অনুগামীদের মধ্যেও।
ইন্দিরা গান্ধীর প্রিয়, প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির স্নেহধন্য, সোমেন মিত্র’র সতীর্থী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের পরিষদীয় রাজনীতিতে পঞ্চাশ বছরের অভিজ্ঞ। তিনি সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলিয়েছিলেন মাত্র ২৬ বছর বয়সে। আবার রাজনৈতিক জীবনের সায়াহ্নে দক্ষ হাতে পরিচালনা করেছেন কলকাতা পুরসভার মেয়রের পদ। সেই সাফল্য অব্যাহত ছিল মমতার রাজনৈতিক দল ও ক্যাবিনেটে।
সুব্রত মুখোপাধ্যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজের সারেঙ্গাবাদের ছেলে ছিলেন। ছয়-এর দশকে পড়তে এসেছিলেন কলকাতায়। অ্যানথ্রোপলজিতে বিএসসি নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন বঙ্গবাসী কলেজে। তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্কিওলজি-তে মাস্টার্স করেন। এরপর পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করেন ডিপ্লোমা মিউসিওলজি বা মিউজিয়াম স্টাডিজে। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের পরিবারের অন্য কোন সদস্য কোনওদিন রাজনীতির ধারে কাছেও ছিলেন না৷ বাবা ছিলেন শিক্ষক৷ বঙ্গবাসী কলেজে পড়তে এসে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির সঙ্গে আলাপ৷ তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’জনের ঘনিষ্ঠতা গাঢ় হয়৷ সুব্রত মুখোপাধ্যায় যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকছেন, তখন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষের পথে৷ সেই থেকেই তাঁর হাত ধরে রাজনীতিতে প্রবেশ তাঁর।
তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বার্তা দিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। বিরোধী দলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী শোক প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘প্রবীণ রাজনীতিবিদ এবং বর্ষীয়ান ক্যাবিনেট মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে ব্যথিত ও মর্মাহত। তাঁর পরিবারের সদস্য, ভক্ত ও সমর্থকদের প্রতি আমি সমবেদতা জানাই।
রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার জানিয়েছেন, ‘রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এক নক্ষত্রের পতন হলো। মাত্র ২৬ বছর বয়সে তিনি ক্যাবিনিট মিনিস্টার হয়েছিলেন। সত্যি কথা বলতে, রাজনীতিবিদ হিসেবে সত্যিই তিনি ঈর্ষনীয় ছিলেন।’ এক সময়ের সতীর্থ। বহু রাজনৈতিক ঘটনার সাক্ষী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য এবং আব্দুল মান্নান। তাঁরা বলেন, সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের।
তাঁর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসান। বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের পক্ষ থেকে সকালে রবীন্দ্র সদনে তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসান।এক শোকবার্তায় তিনি জানান, ‘সুব্রত মুখোপাধ্যায় বাংলাদেশের একজন অকৃত্তিম বন্ধু ছিলেন। কলকাতাতেও সবসময় শত কর্মব্যস্ততার মাঝেও তিনি আমাদের দূতাবাসে এসে বিভিন্নভাবে ামাদের সহযোগিতা করেছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন বাংলাদেশ থেকে আসা শরনার্থীদের দেখাশুনা, শিবির পরিচালনা করা, শরনাথীরদের সিমান্ত দিয়ে ভারতের বিভিন্ন শরনার্থী শিবির গুলোতা নিরাপদে পৌছে দেয়া সহ নানাভাবে তিনিা আমাদের সহযোগিতা করেছিলেন। তাঁর এই অবদান বাংলাদেশের জনগণ চিরদিন কৃতঞ্জতার সাথে স্মরণ করবে।’
বিকেল পৌনে পাঁচতায় গান স্যালুটের মাধ্যমে কেওড়াতলা শ্মশানে সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। শেষকৃত্যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। প্রিয় নেতাকে একে একে শ্রদ্ধা জানালেন ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, দেবাশিস কুমার, ইন্দ্রনীল সেন, সুব্রত বক্সিরসহ আরও অনেকে। সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে শ্রদ্ধা জানান কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রমাণিক, বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ এবং বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা। শেষবারের মতো তাঁকে শ্রদ্ধা জানান রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য।