ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে চারটি সংগঠনের আকস্মিক ধর্মঘটের ডাক
এম এ রহিম, বেনাপোল
বেনাপোল সিমান্ত : অনির্দিষ্ট কালের ধর্মঘটের কারণে ভারতের পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি পুরোপরি বন্ধ রয়েছে। আজ সকাল থেকে কোন পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশর বেনাপোলে ঢুঁকছেনা। দু’দেশর বন্দরের রাস্তার দু’পাশে প্রায় ছয় শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক আটকে রয়েছে। ওই সব ট্রাকে বেশীর ভাগই কাঁচা মাল রয়েছে। কালকের মধ্যে সুরাহা নাহলে ব্যাবসার সাথে জড়িত ব্যবসায়ীদের বেশ কয়েক কোটি টাকা লোকশান দিতে হবে। এই নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা এখন চিন্তিত।
নির্দিষ্ট কিছু দাবী দাওয়া না মেটায় পেট্রাপোল বন্দর ব্যবহারকারী ৪টি সংগঠনের ডাকে এই ধর্মঘট চলছে। গত বৃহস্পতি বার যৌথ সভার সিদ্দান্ত অনুযায়ী পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষকে আলটিমেটাম দিয়েছিল রবিবারের মধ্যে তাদের দাবী দাওয়া না মেটলে সোমবার সকাল থেকে তারা পেট্রাপোল কাজ বন্ধ করে দেবে। কিন্তু সরকার বা বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের কোন দাবী না মানায় এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, বলেছেন পেট্রাপোল বন্দরের আমদানি রফতানি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী। কার্তিক বলেন, কোভিড ১৯ এর কারনে তাদের ব্যবসা বানিজ্যে আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। আগে যেখানে ২৪ ঘন্টায় ৭ শ থেকে সাড়ে ৭শ পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে রফতানি হতো। করোনার কারনে এখন মাত্র সাড়ে ৩শ ট্রাক পণ্য রফতানি হচ্ছে। এরপর নতুন ল্যান্ড পোট ম্যানেজার ব্যবসায়ীদের কোন কথা না বলে বন্দর এলাকায় প্রবেশের উপর নতুন নতুন আইন তৈরী করে আমাদের বাণিজ্যে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। নতুন ম্যানেজার বিএসএফকে কাজে লাগিয়ে পরিবহন কর্মিদের বন্দর আইসিপি অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছেনা। গত এক সপ্তাহ ধরে তারা পেট্রাপোল সেন্ট্রাল পার্কিং এর সামনে বিক্ষোভ করেছেন ম্যানেজারের নানা হয়রানীর বিরুদ্ধে। পণ্য খালাস এবং বোঝাই করা যাঁদের দায়িত্ব তাঁদের প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়ায় আমদানি-রফতানি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর জন্য পেট্রাপোল বন্দরে দায়িত্বর সরকারি আধিকারিকদের অযোগ্যতাই দায়ী।
কার্তিক চক্রবর্তী আরো বলেন, আমাদের দাবী আমদানি-রফতানী কাজে পেট্রাপোল সেন্ট্রাল পার্কিং (ল্যান্ড পোর্ট) এর ম্যানেজার কমলেশ সাহানীর খামখেয়ালিপনা ও তাকে অনতিবিলম্বে অপসারণ করা, সাথে সাথে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) এর হয়রানি বন্ধ করা ও কজের জন্য নতুন কার্ড তৈরি না হওয়া পর্যন্ত পুরোনো নিয়মে তাদের আইসিপিতে প্রবেশ করতে দিতে হবে। সুনির্দিষ্ট এই দাবীতে ৪টি সংগঠন অনির্দিষ্ট কালের এই আন্দোলনের ডাক দেয়। ওই চার সংগঠনের মধ্যে রয়েছে, বনগাঁ গুডস ট্রান্সপোর্ট এসোসিয়েশন ,বনগাঁ ট্রাক মালিক সমিতি, পেট্রাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস স্টাফ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ও বনগাঁ মহকুমা ট্রাক শ্রমিক ইউনয়ন।
পেট্রাপোল এক্সপোর্ট এন্ড ইমপোর্ট এ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রদীপ দে ও বনগাঁ গুডস ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খোকন পাল এই প্রতিনিধিকে বলেন, পেট্রাপোল ইমেগ্রেসন চেক পোস্টে ঢুকতে পরিবহণ কর্মীদের বিএসএফ কর্মীরা কাগজপত্র দেখোর নামে চরম দুর্ব্যবহার ও হয়রানি করছে বেশ কিছু দিন ধরে। আমরা এর আগে তাদের সতর্ক করেছি কিন্তু তাদের হযরানি বন্ধ হয়নি ফলে আমাদের ধর্মঘট ডাক ছাড়া কোন উপায় ছিলনা।
প্রদীপ দে বলেন, বন্দর অভ্যান্তরে প্রবেশ করতে না পারায় আমদানি-রফতানি কাজে জড়িতদের নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এসব সমস্যার কারনে গত সপ্তাহেও ওই একই দাবীতে দু‘দিন ৪ ঘন্টা করে বাংলাদেশে পণ্য রফতানি বন্ধ রাখা হয়েছিল।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, আমদানি-রফতানি বন্ধ বা পেট্রাপোল বন্দরে ধর্মঘটের কোন চিঠি আমরা পাইনি। শুনেছি পেট্রাপোলে ল্যান্ডপোর্ট ম্যানেজার ও বিএসএফ-র বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী ও ট্রান্সপোর্ট এসোসিয়েশন আন্দোলন করছেন। সকাল থেকে আমদানি-রফতানী বন্ধ রয়েছে। পাসপোর্ট যা্ত্রী চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
স্থানীয় এক রফতানিকারক বলেন, পার্কিংয়ে তাঁদের লোকজনকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। যার ফলে কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে আমদানি এবং রফতানিও বন্ধ করা ছাড়া বিকল্প কোন রাস্তা নেই। একটি গাড়ি বাংলাদেশে ঢোকার সময় অনেক রকম কাজ আছে। সেই কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
বিএসএ্ফ সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে আইসিপি-পেট্রাপোলে একাধিক চোরাচালানের ঘটনা ঘটেছে, সেই সব নজরে আসতেই বিএসএফ তাদের নজরদারি এবং সতর্কতা ব্যবস্থা আরও কড়াকড়ি করতে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। সম্প্রতি ভারতের নিরাপত্তার প্রশ্নে পরিবহন কর্মীদের সেখানে যাওয়ার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বিএসএফ সাফ জানিয়েছে, জাল ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী চালককে কোনও ভাবেই বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া যাবে না, কারণ এই ধরনের চালকরা জাল ড্রাইভিং লাইসেন্সের ভিত্তিতে শুল্ক বিভাগ থেকে গাড়ির পাস নেয়, যার ভিত্তিতে বিএসএফ ট্রাকগুলিকে বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যের সুষ্ঠু পরিচালনা নিশ্চিত করার জন্য, বিএসএফ বনগাঁ ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনকে একটি স্থায়ী অপারেটিং পদ্ধতি অনুসরণ করতে বলেছে যাতে দেশের নিরাপত্তা এবং স্বার্থের সঙ্গে আপস করা না।